করোনায় নতুন দরিদ্র আড়াই কোটি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২১, ২০২১, ০৫:৫৯ পিএম

করোনায় নতুন দরিদ্র আড়াই কোটি

করোনা সংক্রমণের এই সময়ে দেশে শহরে বস্তিবাসীর আয় করোনার আগের সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমে গেছে। বস্তিবাসীর ৮ শতাংশ এখনো বেকার। এ ছাড়া গত এক বছরে করোনার সময়ে ৪ শতাংশ অতিদরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতমঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের এসব তথ্য তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত টেলিফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী এই গবেষণা জরিপ চালানো হয়। এতে কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতি-প্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কিত নানা তথ্য তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় কি বলা হয়

গবেষণায় বলা হয়, করোনা মহামারি সংক্রমণের এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু ঋণের জালে জড়িয়ে এবং সঞ্চয় হারিয়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো দৈনন্দিন জীবন চালাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। বিশেষ করে শহুরে বস্তিবাসীর অবস্থা বেশ ভয়াবহ।

জরিপে বলা হয়, দরিদ্র নয়, কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ৭২ শতাংশ গত বছরের জুনে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে। সেই ‘নতুন দরিদ্র’দের ৫০ শতাংশ এখনো দারিদ্র্যঝুঁকিতে রয়েছে; শতাংশ হারে যার পরিমাণ শহরে ৫৯ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৪ শতাংশ। তবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এর পরও কভিডের আগে কাজ ছিল কিন্তু এখন বেকার, এমন মানুষ রয়েছে ৮ শতাংশ।

করোনায় কর্মহীনতার ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কভিডের আগে কর্মজীবী ছিলেন, এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছরের জুন মাস থেকে এখনো বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নেমে এসেছে ১৬ থেকে ৬ শতাংশে।

কর্মসংস্থান পরিবর্তনের চিত্র

গবেষণায় কভিডের প্রভাবে স্বল্প আয় ও বেকারত্বের পাশাপাশি কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের প্রকৃতি বদলে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।  অনেককেই পেশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে নতুন পেশায় যুক্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অনেকে দক্ষ শ্রমিক থেকে বেতনভুক্ত কর্মী এবং কারখানার কর্মীরা দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।

যৌথ গবেষণার তথ্য মতে, শুধু কৃষি খাতই ইতিবাচক অবস্থান গড়তে পেরেছে। শহরে আয়ের সুযোগ কমে যাওয়ায় বস্তি থেকে গ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেক। গত বছর ২৭.৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছাড়ে, যাদের মধ্যে ৯.৮ শতাংশ এখনো ফেরেনি। আবার দরিদ্র নয়, এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কভিডপূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণিতে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

গবেষকদের বক্তব্য

সংবাদ সম্মেলনে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে সামাজিক সুরক্ষা নামমাত্র ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এটিকে এখন অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। শহরের দরিদ্র শ্রেণি এবং নতুন দরিদ্রদের জন্য বর্তমানে থাকা সুরক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি কার্যকর ও প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ আরো কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত।’ তিনি আরো বলেন, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন আয়ের ধাক্কা সামলাতে ‘স্মার্ট’ লকডাউন দরকার। এটি স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারও বটে।”

এ সময় ড. ইমরান মতিন তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কম। আর কভিড-সৃষ্ট এই অবস্থা নারীদের শ্রমবাজার থেকে আরো ছিটকে ফেলতে পারে।’

Link copied!