প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে নিতে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সার্চ কমিটির ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হয়েছে। শনিবার বৈঠকের প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনে ইসি গঠনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেয়ার আগে একটি শর্ট লিস্ট করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত নামগুলো যেন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় সেই দাবি জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া কোন দুর্নীতিবাজ, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব আছে এবং আইন লঙ্ঘন করেছেন এমন ব্যক্তি নাম যেন না আসে- সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তারা। এমনকি ইসি গঠনে যাদের নাম আসবে তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের হয়, সেটিও বলেছেন তারা।
শনিবার সকাল ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে বিশিষ্টজনের সঙ্গে সার্চ কমিটির প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারী রোববার বিকাল ৪টায় ২৩ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। দুদিনব্যাপী বৈঠকের প্রথম দিন দুই দফায় ২৫ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি।
প্রথম সেশনে ২০ জনের উপস্থিতি থাকার কথা থাকলে অংশ নেন ১৪ জন। আর দ্বিতীয় সেশনে ১১ জনের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল যা বললেন
সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল গণমাধ্যেমে বলেন, “এমন ব্যক্তি যেন না আসে, যে বিভিন্ন সরকারের সময় আনুকূল্য; অতিরিক্ত প্রমোশন-উপকার পেয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন লোক যেন না আসে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, দুর্নীতি এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আছে- এমন লোকজনও যেন না আসে।”
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না। ভালো একটি নির্বাচন কমিশন গঠন সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি প্রাথমিক ধাপ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ করতে হবে। নির্বাচনকালে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকালীন পরিবেশ কী হবে সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে।”
ব্রতির নির্বাহী পরিচালক
নির্বাচন পর্যবেক্ষনকারী সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেছেন, “উৎকৃষ্ট নামের নির্বাচন দেখেছি আবার নিকৃষ্ট মানের নির্বাচন দেখেছি। এ দেশে গণতন্ত্রের উত্থান দেখেছি, আবার পতন দেখেছি।”
সার্চ কমিটি এমন একটা ক্রান্তিলগ্নে তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেই লগ্নে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।যার ফলে তাদের প্রধান পদক্ষেপ এমন হতে হবে যাতে আমরা এটা পুনর্গঠন করতে পারি। আবার আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারি।”
প্রস্তাবিত নামগুলো পাবলিক অর্থাৎ জনগনের সামনে আনতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু ১০ জন নয়, ২০ জন ৩০ জন একটা শর্টলিস্ট করে অনলাইনে ছেড়ে দিতে হবে।”
ডা. জাফরুল্লাহ যা বললেন
সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, “রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবেই। বিএনপি রাজপথে দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন করবে, সেটা তাদের অধিকার। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি সংলাপে না বসে ঠিক করেনি। এখন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যে সার্চ কমিটি কাজ করছে, তাদের সঙ্গে বিএনপির বসা উচিত হবে।” একই সঙ্গে বড় দল হিসেবে বিএনপিকে আবারও বৈঠকে বসার আহবান জানানো সার্চ কমিটির উচিত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শ্যামল দত্ত যা বললেন
সার্চ কমিটির সাথে বৈঠক শেষে দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “আমরা সুনির্দিষ্ট কারো নাম প্রস্তাব করি নেই। আমরা বলেছি বিগত নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যা এই নির্বাচন কমিশনারকেই দূর করতে হবে।”
সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু
বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি এবং বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক মোজোম্মেল বাবু বলেন, “যাদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে তাদের তালিকা আগে থেকে সংবাদপত্রে প্রকাশ করলে তাদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কোন অভিযোগ থাকলে তা আগে থেকেই জানতে পারবেন। এতে সকলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ আমরা আর্মি, পুলিশ, প্রসাশনের কোন বিভাজনে না গিয়ে সিভিল সোাইটি থেকে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করতে বলেছি।এর মধ্যে লেখক, সাংবাদিক ও নারী প্রতিনিদ্ধিত্ব যাতে বাড়ায় সেটি আমরা নিশ্চিত করতে বলেছি।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন জানান, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন একটি নির্বাচন কমিশনার গঠন করতে হবে। এটাই আমাদের চাওয়া তাদের কাছে।