বিদেশি প্রভুদের পদলেহন করে শান্ত বাংলাদেশকে অশান্ত করতে তৎপর বিএনপি-জামাত অপশক্তিকে রুখতে যুবলীগই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গির কবির নানক। এসময় তিনি বিএনপিকে প্রতিহত করতে যুবলীগকে সার্বক্ষণিক রাজপথে থেকে মোকাবিলা করার আহবান জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর উত্তরা ৩নং সেক্টরে ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা যুবলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি; একটি লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি, জাতীয় সংগীত পেয়েছি, স্বাধীন জাতি সত্ত্বা পেয়েছি। জাতির পিতার সারা জীবনের সংগ্রামের ফসল আমাদের সাধের প্রিয় মাতৃভূমি। আমাদের সেই প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।”
জিয়াউর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতাকে, তাঁর পরিবারকে হত্যা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও বলেন, “রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে এনেছেন। দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ, বিশ্বের বিস্ময়। সেই শান্তির বাংলাদেশকে ওরা আবারও পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেবার ষড়যন্ত্রে মত্ত হয়েছে।”
বিভিন্ন প্রতিকূলতার সময়েও যুবলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে সাবেক এই স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যুবলীগ '৭৫ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে রাজপথে ছিল। ১/১১তে রাজপথে ছিল। আজকের যুবলীগও রাজপথে থেকে বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের জবাব দিবে। আমি বিশ্বাস করি, যুবলীগ যেভাবে রাজপথে আছে, সেভাবে থাকলে বিএনপি পালাবার পথ পাবে না। ওদের এখন নেতা কে? খালেদা জিয়া দণ্ডিত আসামি, তারেক জিয়া দণ্ডিত আসামি। দণ্ডিত আসামি তারেক জিয়ার রাজনীতি করার এত খায়েস থাকলে দেশে এসে রাজনীতি করুক। দেখবো হিম্মত কত।”
বাংলাদেশের মানুষ জানে তারেক জিয়া গ্রেনেড হামলার মূল আসামি, জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষক-উল্লেখ করে যুবলীগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, “হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে খালেদা-জিয়া দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। আজ বাংলাদেশ শান্তির দেশ। ওদের ভাল লাগে না। এজন্য দেশকে অশান্ত করতে বিদেশি প্রভুদের পদলেহন করে ওরা শান্ত দেশকে অশান্ত করতে চায়। ওদের প্রতিহত করতে যুবলীগকে সার্বক্ষণিক রাজপথে থেকে মোকাবিলা করতে হবে। আমি জানি, এই যুবলীগই সেটা পারবে। বিএনপি-জামাত অপশক্তিকে রুখতে যুবলীগই যথেষ্ট।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধীচক্র জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। আজকের দিনে এসে বলতে চাই। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতেন আজকের বাংলাদেশ বহু আগেই স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে যেত। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমরা আমাদের জাতির পিতাকে হারিয়েছি। জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতা বিরোধীচক্র, রাজাকার-আলবদর-আলশামস তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”
তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান এই বাংলার মাটিতে বাংলার যুবসমাজ ও ছাত্রসমাজের হাতে অবৈধ অর্থ, অবৈধ অস্ত্র, অবৈধ হিরোইন, গাজা, মদ তুলে দিয়েছিলেন। সেই জিয়াউর রহমানের কুসন্তান তারেক রহমান এবং তার বিধবা পত্নি খালেদা জিয়া আজকের বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে নবদিগন্তে- সেই বাংলাদেশকে আবার ধ্বংস করার নীলনকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে।”
নিখিল বলেন, “উন্নয়নের প্রতীক, মানবতার প্রতীক, এদেশের মানুষের কল্যাণের প্রতীক আমাদের প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে ওরা হত্যা করতে চায়। আজকের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আজকে ঢাকার যুবলীগ, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগ বা সারা বাংলাদেশের যুবলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের দক্ষ নেতৃত্বে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কার্যকরি পরিষদের নেতৃত্বে সারাদেশে যুবলীগ আজকে মাঠে-ময়দানে জাগ্রত আছে।”
তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, বিদেশী প্রভুদেরকে এবং এদেশে যেসকল সুশীল সমাজ আছে যারা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ২০০১ সাল আর ২০২৪ সাল এক জিনিস নয়। ২০০১ সালে বাঙালি জাতিকে ঘুম পাড়িয়ে এদেশের সম্পদ লুটে নেওয়ার জন্য সেদিন বিদেশী প্রভুরা বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আমরা সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি ইনশাআল্লাহ এবং খালেদা জিয়া ও বিদেশী প্রভুদের কোন ষড়যন্ত্রই বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হবে না ইনশাআল্লাহ।”
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সোহেল পারভেজ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মুক্তার হোসেন চৌধুরী কামাল।