মুহিবুল্লাহ হত্যার দ্রুত তদন্ত চায় অ্যামনেস্টি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১, ০৩:০৬ পিএম

মুহিবুল্লাহ হত্যার দ্রুত তদন্ত চায় অ্যামনেস্টি

কক্সবাজরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মুহিবুল্লাহকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং তিনি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতেন। তার প্রস্থান রোহিঙ্গাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব হলো এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া।

তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের রিফিউজি সংস্থার প্রতি আহ্বান জানচ্ছি, তারা একযোগে কাজ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে।

সাদ হাম্মাদি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসা বেড়েই যাচ্ছে। এবং একই সঙ্গে বাড়ছে মাদক চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধও‘। ভবিষ্যতে এধরনের রক্তপাত এড়াতে বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি মুহিব্বুল্লাহর বুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ২০১৭ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে মুহিবুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। বিদেশিদের কাছেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ১৫ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ বা এআরএসপিএইচ। স্থানীয় বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গেও গড়েন যোগাযোগ। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার একজন হয়ে ওঠেন। রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তখন থেকেই সে রয়েছে টেকনাফ অঞ্চলে।

দেশের বাইরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করেন একাধিক দফায়। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গার ঢল নামার পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। সুস্পষ্টভাবে মুহিবুল্লার আজকের অবস্থানের মূল উত্থান হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার পর। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা থেকেই মদদ পায় মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ।

ইংরেজি ভাষা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে বিদেশিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ করানো হয়েছে। 

এই মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেছিলেন সেখানেও যোগ দিয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ।

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, ক্যাম্পগুলোয় মুহিবুল্লাহবিরোধী অন্য একটি সশস্ত্র গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু তারা সংখ্যায় কম, আর্থিকভাবে দুর্বল ও অস্ত্রশস্ত্রও তেমন নেই। এ কারণে মুহিবুল্লাহ গ্রুপের সমর্থিত ক্যাডাররা তাদের ‘কাফির’ বা বিশ্বাসঘাতক অভিহিত করে হত্যা করেছে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩২ জন ‘মোনাফেক’ হত্যার স্বীকার হয়েছেন এদের হাতে।

সূত্রের খবর, আরেক পক্ষ থেকে মোনাফেক দাবি করে হত্যার বাইরে আরও কমপক্ষে ১০ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছে প্রভাবশালী গ্রুপটির কথার অবাধ্য হওয়ায়। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিক্ষিতদের তিনজন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে খুন হয়েছেন। তবে এটা গত বছরের ৫ নভেম্বরের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার আগে।

এমনকি প্রভাবশালী গ্রুপটি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে খুনের বাইরেও হুমকি-নির্যাতন চালায় হামেশায়। এমনকি বিদেশি এনজিগুলোর সাহায্য-সহযোগিতা বিতরণ প্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা গোষ্ঠীটি ত্রাণও বন্ধ রাখে বিরোধিতাকারী পরিবারগুলোর।

জানা যায়, গোপনে সশস্ত্র গ্রুপটি পরিচালনা করা হলেও প্রকাশ্যে থাকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস। তাই তাদের কোনো কথার অবাধ্য হতে চায় না বা পারে না সাধারণ কোনো রোাহিঙ্গাই।

Link copied!