যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত ও ইইউ মিশন প্রধানকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জুলাই ২৬, ২০২৩, ০৫:২২ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত ও ইইউ মিশন প্রধানকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ১২টি দেশের দূতাবাস, হাইকমিশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ বিবৃতি দেওয়ার জেরে ওই ১২টি দেশ ও ইইউ রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে সতর্ক করা হয়েছে।  

বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, মিশন প্রধান এবং ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের  সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, “ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা ১৩ কূটনীতিকের আচরণে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ। তাদের মূল্যায়নে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি, তাদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।” 

তাদের আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা না বলতে আহ্বান জানিয়েছি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সচেতন থাকতেও তাদের সতর্ক করা হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানকে ডাকার  বিষয়টিকে ‘তলব’ বলতে চাননি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের তলব করা হয়নি। আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছি।

মো. শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, “রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানদের দেয়া বিবৃতি ভিয়েনা কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেকোনো ইস্যুতে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে জানাতে হবে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে ১৩টি মিশনের পররাষ্ট্র দফতরেও চিঠি পাঠানো হবে।”

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানেরা কি বলেছেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে  মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, “রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানরা বলছেন, নির্বাচনে সহযোগিতামূলক আচরণের ভিত্তিতেই তারা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।”

প্রসঙ্গত, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের দিন হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। পরে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইডেনসহ ১২টি পশ্চিমা দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন এবং ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল যৌথ বিবৃতি দেয়।

গত ১৯ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিৃবতিতে বলা হয়, ‘১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই।

আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার দাবি জানাই। আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’ 

যেসব দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে সেগুলো হলো- কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং  ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডেলিগেশন।

বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের তলবের বিষয়টি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ আগেও নানা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তলব করেছে। এর আগেও, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে তলব করে অসন্তোষ জানানোর পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে।

গত ২০ জুলাই রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়াম জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি শেলডন ইয়েটকে তলব করে অস‌ন্তোষ প্রকাশ ক‌রেন।

পরে একই  দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মো‌মেন গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে ডে‌কে‌ছি। ত‌বে দুর্ভাগ্যবশত তিনি না থাকায় ভারপ্রাপ্ত মিশনপ্রধান এসেছেন। আমরা তা‌কে ব‌লে‌ছি, ঢাকায় এক‌টি দুর্ঘটনা ঘ‌টে‌ছে, কারা ক‌রে‌ছে, আমরা জা‌নি না। এখা‌নে লোক তো মারাও যায়নি। ত‌বে ক‌য়েকজন‌কে গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে’।

 ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরও ব‌লেন, “জা‌তিসং‌ঘের নাম ব‌্যবহার ক‌রে টুইট বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোড অব কনডাক্ট (কূটনৈতিক শিষ্টাচার) আছে কি না, আমরা সেটাই তা‌দের কা‌ছে জান‌তে চে‌য়ে‌ছি’।

Link copied!