সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১, ০৮:২৪ পিএম
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করতে অনাগ্রহী রাজধানীর অধিকাংশ বাইকার। তার পরিবর্তে অধিক লাভের আশায় ব্যক্তিগতভাবে যাত্রীদের ডেকে নিয়ে মুখে মুখে ভাড়া ঠিক করেই রাইড শেয়ার করছেন তারা।
অধিকাংশ বাইকারের অভিযোগ, রাইড শেয়ারিং প্রোগ্রামের বিভিন্ন জটিলতার কারণে এভাবে যাত্রী পরিবহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাইকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুতে রাইড শেয়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমেই যাত্রী পরিবহন করতেন বাইকাররা। পরবর্তী সময়ে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর কমিশন বাড়িয়ে দেয়া এবং প্রণোদনা প্যাকেজগুলো কমিয়ে দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এছাড়াও বাইকের অবস্থান জানার পরও শেয়ারিং কোম্পানীগুলো যাত্রীর অনুরোধের কল গ্রহণ করেন বাইকারের অবস্থান থেকে কাছাকাছি আশেপাশের কোন এলাকায়। যেখানে যাওয়ার আগেই অনেক সময় যাত্রী তার অনুরোধের কল ক্যান্সেল করে দেন। বাইকারদের অভিযোগ, পরে এর দায় একচ্ছত্রভাবে চাপিয়ে দেয়া হয় তাদের উপর। এভাবে যাত্রীর কল একাধিকবার মিস করলে শুরুতে ৯ শতাংশ ফাইন দিতে হয় তাদের। এরকম একাধিকবার ঘটলে দ্বিতীয় ধাপে ১৮ শতাংশ এবং তার পরে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হয়। এছাড়াও রাস্তায় অকারণে মামলার কোন দায়ভার কোম্পানিগুলো নিতে চায় না। অভিযোগ আছে, যাত্রীদের অফারের কারণে ছাড় থাকলে অনেক সময় তার সেই অর্থ কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করতেও ভোগান্তিতে পরতে হয় বাইকারদের। আবার শুরুর দিকে ভাড়াও বেশি ছিল সাথে কোম্পানির কমিশনও ছিল ১০-১৫ শতাংশের মাঝে যা বর্তমানে ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যক্তি পর্যায়ে একজন বাইকার ১০০ টাকার একটি ট্রিপে যাত্রী নিলে তার সম্পূর্ণ অর্থই তার নিজের পকেটে যায় তেল খরচ বাদ দিয়ে। বাইকারদের দাবি ১০০ টাকায় ক্ষেত্র বিশেষে ১০-১৫ টাকার তেল খরচ হয় তাদের। শেয়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ২৫ শতাংশ দিতে হয় কোম্পানিকে। কোম্পানির কমিশন আর তেল খরচ মিলে প্রায় ৪০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যায়। এর মাঝে নেই কোন পয়ার্কিং এর ব্যবস্থা। বিপাকে পরতে হয় কোন পার্টস নষ্ট হয়ে গেলেও। বাইকাররা আরও দাবি করেন, যাত্রীরাও কনটাক্টে চলাচলই বেশি পছন্দ করেন৷
রাজধানীর কদমফোয়ারা মোড়ে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছেন, ইব্রাহিম হোসেন সোহাগ। কনটাক্টে রাইড শেয়ার করা অ্যাপের চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘‘উপায় নাই ভাই এভাবেই চালাচ্ছি। এই যে আমি প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি এখন আমার মোবাইল নেটওয়ার্ক লোকেশন খোলা আছে তারপরও দেখা গেল যে কাকরাইল থেকে কল আসছে। এই জ্যাম ঠেইলা যাইতে যাইতেই সেই যাত্রী তার কল বাতিল করে দিলেন। আবার আগে এইখান থেকে মিরপুর গেলে ২০০ টাকা ভাড়া আসতো যেখান থেকে আমরা পাইতাম ১৭০ টাকা আর কোম্পানির থাকতো ৩০ টাকা তেল খরচ বাদে ১৫০ টাকা পাওয়া যেতো কিন্তু এখন সেটা কোম্পানির কমিশন এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ভাড়ার রেট কমে যাওয়ায় আমাদের পকেটে আসে ১০০-১১০টাকা’’। উপায় নাই তো কনটাক্টে চালানো ছাড়া, তিনি যোগ করেন।
গুলিস্তানের মাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন বাইকার। তাদের অধিকাংশের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। শিক্ষিত বেকার হয়ে বাইক চালাচ্ছেন, যা তাদের পরিবার পরিজন জানেনা।
বাইকার ফারুক আলম ক্ষোভের সাথে দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘‘কিছু একটা কইরাতো খাইতে হবেরে ভাই। পেটের দায়ে রাস্তায় নামসি একটু পর পর পুলিশ আইসা দৌড়ান দেয়। কালকে একজন নিজের রিজিকে আগুন দিসে আমারও হয়তো দিতে হবে কোন একদিন। কি করবো ভাই চুরি ডাকাতি তো আর করছি না। আমাদের দাঁড়ানোর কোন জায়গা নাই’’।
কাকরাইল মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন বাইকার মামুন হোসেন শেখ। তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘‘নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স, রোড পারমিট, ইনস্যুরেন্স কাগজ আমার বাইক আর কমিশন খাবে কোম্পানি। অযথা মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও ট্রাফিক পুকিশ শুধু আটকাইয়া রাইখা মামলা দেয় কোম্পানি কোন দায়িত্ব নেয়না। সঠিক নির্দেশনা থাকলে আমরা অবশ্যই আইন আনুযায়ী রাইড শেয়ার করতে প্রস্তুত’’।
ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার'স ইউনিয়নের সাধারাণ সম্পাদক বেলাল হোসেন দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘‘আমার জ্বালানি, আমার বাইক, আমার পরিশ্রম আমি পাচ্ছি সম্পূর্ণ টাকার ষাট শতাংশ আর কোম্পানি শুধু অ্যাপ ব্যবহারের জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন ২৫ শতাংশ। কোম্পানিগুলো শুধু তাদের মুনাফার লোভে যাত্রী আর ড্রাইভারদের মাঝে জটিলতা তৈরি করছেন’’। আমি মনে করি’ কোম্পানির কমিশন ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিৎ না।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যক্তিগত পরিবহনে রাইড শেয়ারিংকে তিনি আইনত অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘রাইডারদের আর্থিক অসহায়ত্বকে মানবিকভাবে বিবেচনা করে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিৎ এই সমস্যা সমাধানে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ড্রাইভার এবং যাত্রীদের কথা ভেবে অবশ্যই সরকারকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে’’।