রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়া হবে না বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার কোনো চিত্রই চোখে পড়ছে না। তবে ডিএনসিসি জানিয়েছে, সংস্কারের কাজে খোঁড়াখুঁড়িতে জনগণের যেনো দুর্ভোগ না হয় তার জন্য খেয়াল রাখা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের নাখালপাড়ার রাস্তা যেনো এক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে। রাজধানীর ফার্মগেট থেকে ওই রাস্তা দিয়ে মহাখালী, উত্তরা ও এয়ারপোর্ট যাওয়া যায়। ডিএনসিসি রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের কাজে প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে ওই রাস্তা। যার ফলে বেড়েছে ভোগান্তি ও যানজট।
দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বাস করছেন মোবারক হোসেন নামে এক ওষুধ বিক্রেতা। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “৩ মাস ধরে চলছে এই কাজ। ঈদের সময় কাজ বন্ধ ছিলো। এখন আবার শুরু হয়েছে। কবে নাগাদ শেষ হয় তাও বুঝতে পারছি না।”
মোবারক হোসেনের মতো একই অভিযোগ করেন রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবা আলম। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “রাস্তা খোঁড়ার পর থেকেই চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পুরোটা কাদামাটিতে ভরে যায়। হাঁটার সময় অনেকে স্লিপ খেয়ে পরে যায়।”
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, তেজকুনিপাড়ার পোস্ট অফিসের মোড় থেকে বিজয় স্মরণী ফ্লাইওভারের নিচ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের জন্য রাবেয়া ট্রেডার্স ও জীবন কন্সট্রাক্শন নামক দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এই কাজের জন্য ডিএনসিসি রাবেয়া ট্রেডার্সকে দিয়েছে ৫৫ লাখ ৯ হাজার টাকা ও জীবন কন্সট্রাক্শনকে দিয়েছে ৫১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। গত এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি শেষ হওয়ার সময় রয়েছে আর মাত্র ৮দিন।
তবে সরেজমিনে গিয়ে যায় এখনো অর্ধেক কাজও সম্পূর্ণ হয় নেই। স্থানীয়রা জানান, নিয়মিত কাজ করলেও ৩ মাস আগে এই কাজ শেষ হবে না। নাখালপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল খালেক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “কাজ চলছে ধীরে ধীরে। এই কাজ এখনো অর্ধেকও শেষ হয় নেই। কবে নাগাদ শেষ হবে তারও ঠিক নেই।”
তবে কিছুদিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান জীবন কন্সট্রাক্শনের ঠিকাদার শরীফ নুর উদ্দিন প্রিন্স। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এই কাজের জন্য সিটি করপোরেশন চারমাস সময় দিয়েছে। আমরা তার আগেই শেষ করে দেব।”
এদিকে, বৃষ্টির মধ্যে কাজ চলায় রাস্তা হয়ে যাচ্ছে পিচ্ছিল। যার ফলে বিভিন্ন সময় বাইকাররা দূর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন খোরশেদ আলম। ওই রাস্তা দিয়ে বাসায় ফেরার সময় স্লিপ খেয়ে ড্রেনে পড়ে যান। এতে ভেঙ্গে যায় তার ডান হাত। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “স্লাবগুলো এখনো বসানো হয়নি। ড্রেন গুলোতে ঢাকনা দেয়া হয়নি। এর ফলে আমাদের বাইক চালতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”
তবে উন্নয়ন কাজ চলার সময় কিছু সমস্যা হবে বলে জানান ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “উন্নয়ন কাজ চলার সময় কিছু সমস্যা তো হবেই। তারপরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতে নাখালপাড়ার রাস্তা মেরামতের কাজ শেষ হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা ফলোআপ করবো।”
এই বিষয় কথা বলার জন্য ডিনসিসি ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রথমদিকে ফোন চালু থাকলেও পরবর্তীতে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোন ধরনের খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘জ্বরুরি প্রয়োজন না হলে আমরা খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিচ্ছি না। আমরা খোঁড়াখুঁড়ির ব্যাপারে খুবই শক্ত অবস্থানে আছি। জনদূর্ভোগ যাতে না বাড়ে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি।”