বেটা
অক্টোবর ১২, ২০২২, ১০:৫১ পিএম
শুধুমাত্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কিছু হবেনা, এই সরকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল একথা বলেন।
বর্তমান ‘সরকারকে লুটপাট ও গণতন্ত্র হরণকারী’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আপনারা নিরাপদে চলে যান। না হলে পালাবার পথও খুঁজে পাবেন না।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে জনগণ আর কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এটা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন।’
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান-উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করবার জন্য এই চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে শুরু হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার আন্দোলন। চট্টগ্রামের মানুষ যে আগুন জ্বালিয়েছে, সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। আজ থেকে যে আন্দোলন শুরু হলো, সেটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। ফয়সালা হবে রাজপথে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার এখানে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশন সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করে জনগণের গ্রহণযোগ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবে। এর মধ্য দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন হবে যেটা হবে জনগণের পার্লামেন্ট। যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তারাই গঠন করবে পার্লামেন্ট। যদি সেই পার্লামেন্ট গঠিত হয় তাহলেই এই দেশের যতগুলো সমস্যা আছে তা দূর করা সম্ভব হবে।”
এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, জনগণের ভোটের সরকার নয়-উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে সরকার গঠন করে। পরের বার তারা আগের রাতে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ গত ১৪-১৫ বছরে এই বাংলাদেশকে শ্মশান করে দিয়েছে। তারা সবকিছু লুট করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে বলেছিলেন, এখন চালের দাম ৭০ টাকা। আবার নাকি বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। কেন? লুট করার জন্য? ডাকাতি করার জন্য? অথচ আজ দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে।”
দেশের জনগণের নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে কোনো নিরাপত্তা নেই। দিনে-দুপরে ডাকতি হয়। র্যাবের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কিছু হবে না, নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এই সরকারকে। কারণ এই সরকারের নির্দেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জাতিসংঘ পরিষ্কারভাবে বলেছে- বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। এখানে গুম হয়, খুন হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। আমাদের নেতা তারেক জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।”
নির্বাচন কমিশনকে ডিসি-এমপিরা মানেন না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের মাতা গৃহবন্দি। চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে মুক্তি করার জন্য এই দেশের গ্রামে-গঞ্জে চষে বেড়িয়েছেন। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন। খালেদা জিয়াকে যে মামলায় গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে, সে মামলায় জামিন দেওয়া যায়। কিন্তু বছরের পর আটকে রেখেছে এই সরকার।”
সরকারের পদত্যাগ চেয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলছেন- কম খান, কম খরচ করেন। তাহলে আছেন কেন? আমরা ক্ষমতায় এলে চাল-ডাল বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করব, বেকারত্ব দূর করব, মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেব। আমরা সেই বাংলাদেশ ফিরে পেতে চাই। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পতন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার।
