নড়াইলে পুলিশের সামনে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো ও সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের শিক্ষার্থী মো. রহমাতুল্লাহর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের সম্মান শ্রেণির ছাত্র। এ ছাড়া ওই ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় নেতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আখতার হোসেনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না—সেই মর্মে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় নির্লিপ্ততার কারণে কলেজ গভর্নিং বডিকে শোকজ করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদকে শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গত ২৮ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সিন্ডিকেট সভায় ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনের ওপর বিস্তর আলোচনা শেষে উল্লিখিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।
তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন খুলনা বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান। কমিটির সদস্য ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক এ এস এম রফিকুল আকবর। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আ স ম আবদুল হক।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।