দুর্লভ হয়ে পড়েছে চিনি

ফৌজিয়া ফারিহা

জুন ২১, ২০২৩, ০৬:০৫ পিএম

দুর্লভ হয়ে পড়েছে চিনি

দুর্লভ হয়ে উঠেছে নিত্যব্যবহার্য চিনি । প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতে। দুই একটি দোকানে খোলা চিনি আছে। দাম চাচ্ছে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি। বিক্রিও হচ্ছে। সকালের দিকে একটি দোকান থেকে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। পরে সেই দোকানে আর প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কারওয়ান বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

মূলত মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী এবং রাজধানীর ফুটপাত ও গলির মোড়ে থাকা চা দোকানদারেরা প্রতিদিন চিনি কিনেন।

বাংলামোটরের এক গলির চা দোকানদার সেলিম জানান, সকালের (বুধবার) দিকে কারওয়ান বাজার থেকে প্যাকেটজাত চিনি কিনেছেন ১৬০ টাকা কেজি দরে।

আগেরদিন মঙ্গলবারও প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৪০ ও দোকানভেদে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কেন দাম বাড়লো- জানতে চাইলে দোকানীরা বিরক্তি প্রকাশ করেন। বেশিরভাগ দোকানদার কথা বলতে চান না। মেসার্স আল আমিন ট্রেডার্স-এর বিক্রেতা জানান, প্যাকেটজাত চিনি আড়ৎ থেকে কিনে আনতে কেজিপ্রতি দাম পড়ে ১২৭-১২৮ টাকা। অথচ প্যাকেটের গায়ে লেখা ১২৫ টাকা কেজি।

কেনো এমন করছে আড়ৎদার?- এ প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করে ঐ দোকানের ব্যক্তি জানান, সুগার রিফাইনারি মিল ও আড়তে চিনি মজুত করে আটকে রাখা হয়েছে। দাম বাড়লে বাজারে ছাড়বে।

চাঁদপুর ট্রেডিং এর এক কর্মচারী বলেন, কি জানতে চান দোতলায় গিয়ে জিগ্যেস করেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় কারওয়ান বাজারের অভ্যন্তরে দোতলায়ও চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপন্যের মজুদ আছে। কিন্ত দোকান বন্ধ রেখে সামনে একজন বা দুজন করে লোক দাড়িয়ে আছে।

এদিকে, আগেরদিন মঙ্গলবার সুগার রিফাইনার্স মিলমালিকদের সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন চিনির দাম ঈদের আগে না বাড়াতে সিদ্ধান্ত দেয়। বৈঠক সুত্র জানায়, মিল মালিকরা তা মেনেও নিয়েছেন। তারা ঈদের আগে চিনির দাম বাড়াবেন না। কিন্ত তাদের এ প্রতিশ্রুতির কোনও প্রতিফলন বাজারে নেই।

এমনিতেই খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দামে কয়েক মাস ধরেই চিনি বিক্রি হয়ে আসছে বাজারে। এরপরও সোমবার (১৯ জুন) হঠাৎ করেই সুগার রিফাইনার্সরা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেয় আবারও কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বাড়ানোর দাবী নিয়ে। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২০ জুন)
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দকে ডেকে বৈঠক করে।

বৈঠকে বিটিটিসি তাদেরকে জানায় যে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুল্কছাড়ে আনা চিনি এখনো বাজারে আছে। এ তথ্য প্রমাণসহ সুগার রিফাইনার্স মিল মালিকদের কাছে তুলে ধরে বিটিটিসি। এরপরই তারা ঈদের আগে চিনির দাম বাড়ানোর দাবি থেকে সরে আসে। তবে, ঈদের পর বৈঠকে চিনির দাম অ্যাডজাস্ট করার আশ্বাস নিয়েছে তারা বিটিটিসি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে।

বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারদর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো লিখিত প্রস্তাব দিলে তাদের সঙ্গে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে দাম বাড়ানো বা কমানোর বিজ্ঞপ্তি আসে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে। এর আগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর বিটিটিসি পুরো বাজারব্যবস্থা পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেয়।

গত ১১ জুন বিটিটিসি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ৮ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ছিল ৫৫১ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের ৮ জুন তা বেড়ে হয় ৬৭৩ দশমিক ১৫ ডলার। বিটিটিসি প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে জানায় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যের তুলনায় ব্যয় ও মুনাফা হিসাব করে অত্যধিক দামে চিনি বিক্রি করছে স্থানীয় সুগার রিফাইনার্স মিলমালিক ও আমদানিকারকরা।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ও এ বছরের মার্চশেষে হঠাৎ করেই বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে গিয়েছিলো।

একাধিক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, মূলত পর্যাপ্ত চিনি মিলমালিক ও আমদানীকারকদের কাছে মজুত থাকা সত্ত্বেও তা বাজারে না দিয়ে আটকে রেখে দাম বাড়িয়ে অনৈতিক ফায়দা নিতে দফায় দফায় এ সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।

Link copied!