দেশে মাথাপিছু ঋণ ৩৬৫ মার্কিন ডলার: অর্থমন্ত্রী

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

অক্টোবর ৩১, ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম

দেশে মাথাপিছু ঋণ ৩৬৫ মার্কিন ডলার: অর্থমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে  দেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৬৫ মার্কিন ডলার বলে সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সংসদের বৈঠকে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।

একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সংসদকে জানান, ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতির পরিমাণ ৬২ হাজার ৩১২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সাময়িক), যার মধ্যে বহুপাক্ষিক ৩৬ হাজার ৭৮১ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দ্বিপাক্ষিক ২৫ হাজার ৫৩১ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে সংগৃহীত তথ্য মোতাবেক মোট জনসংখ্যা ১৭০ দশমিক ৭৯ মিলিয়নের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৩৬৪ দশমিক ৮৫ মার্কিন ডলার। 

২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ বাবদ ৯শ ৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার এবং আসল বাবদ এক হাজার ৭৩৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সুদ বাবদ এক হাজার ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আসল বাবদ ২ হাজার ৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধের নিমিত্ত বাজেট রয়েছে।  

মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে, বিশ্বব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৫৩৬ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ১৪ হাজার ১১৪ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া থেকে ৫ হাজার ৮৯৯ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার, চীন থেকে ৫ হাজার ৩৭৪ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার, এআইআইবি ১ হাজার ৫০৪ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার, ভারত থেকে ১ হাজার ২৯৯ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ আরও কয়েকটি দেশ ও সংস্থা থেকে ঋণ নেয় বাংলাদেশ।

পাঁচ বছরে ১৪ শ ৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার: জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩) বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১৪ শ ৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে, যার আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। 

তিনি জানান, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মধে ১২শ ৭২ দশমিক ১০ কেজি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে স্থায়ী খাতে (দাবিদার নেই) ১০৯ দশমিক ৭৬ কেজি এবং অস্থায়ী খাতে (দাবিদার আছে) ১শ ১৬২ দশমিক ৩৪ কেজি।  

একই সদস্যের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) অক্টোবর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে তিনশ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। একই সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাঝ থেকে ৪টি প্রকল্পের জন্য ৯১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নামে কোনো কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় চলমান নেই। 

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত কৃষি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ নামে ঋণ বিতরণের একটি খাত রয়েছে।

ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার: ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯। 

আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী, স্পট ট্যাক্স নির্ধারণ বাতিল করা হয়েছে।ব্যক্তি পর্যায়ে কর দাতার সংখ্যা ৮৯ লাখ ৫৩ হাজার: চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, জুন, ২০২৩ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে কর দাতার সংখ্যা ৮৯ লাখ ৫৩ হাজার ২০৬ জন। 

করদাতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে রিটার্ন দাখিলে প্রমাণ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন করদাতা বৃদ্ধি হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি: ময়মনসিংহ ১১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী চলতি মাসের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বর্তমানে গ্রোস রিজার্ভের পরিমাণ ২১ হাজার ১১৬ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার। 

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ রেমিট্যান্সের পরিমাণ হ্রাসের কারণে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে আসলেও কোনো ঘাটতি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও যুদ্ধসংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে এবং মুদ্রা বিনিময় হারে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
 

Link copied!