বেটা
প্রতীকী ছবি
এবারের বাজেটে জুস, এলইডি বাল্বসহ ১৩টিরও বেশি পণ্য ও পরিষেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হবে। এছাড়া আগামী ৩০ জুন শেষ হতে চলা চলতি অর্থ বছরে এয়ার কন্ডিশন (এসি) উৎপাদনে যে ভ্যাট অব্যাহতি আছে তা প্রত্যাহার করা হবে নতুন অর্থ বছরে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্যটির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে।
সরকারকে বিভিন্ন খাতে দেওয়া কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কিছু খাতে কর অব্যাহতি আর না দেওয়া এবং কিছু খাতে আগামী অর্থ বছর থেকে অব্যাহতি না দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এনবিআরের কিছু খাতে কর হার বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে বলে মন্ত্রণালয়েরর একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
শিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য খাতকে সরকার ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে এলেও- আগামী অর্থ বছর থেকে এসি উৎপাদনে ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা আছে এনবিআরের।
উদ্বেগ জানিয়ে তারা বলছেন, এতে তাদের পরিচালন ব্যয় বাড়বে। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময় বাড়তি এই ব্যয়ের ভার ভোক্তাদের ওপর পার করে দিতে হবে।
কর বাড়ানো হবে সিম কার্ড বিক্রির ওপরও
মোবাইল অপারেটরদের সিম কার্ড বিক্রির ওপরও কর বাড়ানো হবে, যা বর্তমানের ২০০ টাকা থেকে বেড়ে হতে পারে ৩০০ টাকা। আসন্ন নতুন অর্থ বছরের বাজেট পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “সিম কার্ড বিক্রির ওপর আরও কর আরোপ ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
অপারেটররা জানান, আগামী অর্থব ছরে নতুন সংযোগের পরিমাণ কমার আশঙ্কা করছে তারা। রাজস্ব নীতির এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে এ খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) ব্যাহত হবে।
নতুন বাজেটে ধাক্কা আসতে পারে রেফ্রিজারেটর-এসিতে
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, “ভ্যাট বাড়ানো হলে উৎপাদন ব্যয় যতটা বাড়তে পারে- সেই ধাক্কা সামলানোর মতো সক্ষমতা এই অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কোনো কোম্পানিরই নেই। এসব ব্যয় তখন ভোক্তাদের ওপর চাপাতে হবে, নয়তো ব্যবসাগুলো ভ্যাট দিতে সমস্যার মধ্যে পড়বে।”
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “ভ্যাটের হার বাড়ানো হলে- আমদানি করা পণ্যের বিপরীতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাতে পারে এই খাত। পাশাপাশি এখনও প্রাথমিক অবস্থায় থাকা এয়ার কন্ডিশনার (এসি) উৎপাদন শিল্পের বিকাশ হয়তো আর হবে না।”
নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওয়ালটন গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, “রেফ্রিজারেটরের স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ মেটানোর সক্ষমতা আছে দেশের উৎপাদনকারীদের। এসির ক্ষেত্রে যা ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে সরকার যখন রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করলে- এই শিল্প বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। নতুন বাজেটে উভয় শিল্পের জন্য হয়তো আরেকটি ধাক্কা অপেক্ষা করছে।”
ওই কর্মকর্তা জানান, সরকারের রাজস্ব নীতি তাদের রপ্তানি বাজার সন্ধানের পরিকল্পনাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। এবার বৈদ্যুতিক বাল্বের ওপর ভ্যাট বসানো হলে তাতে শিল্প ও ভোক্তা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভোক্তাদের নাগালের বাইরে যেতে পারে ম্যাঙ্গো বার-জুস
একইভাবে ম্যাঙ্গো বার ও জুস, তেতুলের জুস, পেয়ারার জুস, আনারসের জুস প্রভৃতি উৎপাদনে ভ্যাটের হার ৫-১৫ শতাংশ করা হলে এগুলো ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, আগামী অর্থ বছর থেকে নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী থার্ড পার্টি কোম্পানিগুলোর সেবা নেওয়া ও নিলামে অংশ নেওয়ার ব্যয় আরও বাড়বে। উভয় পরিষেবার জন্যই ভ্যাটের হার বিদ্যমান ১০-১৫ শতাংশ করতে পারে সরকার।
২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকার প্রায় ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা কর অব্যাহতি দিয়েছিল। এর মধ্যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ও আয়কর অব্যাহতি ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এসব অব্যাহতিকে কর ব্যয় হিসেবে ধরা হয়।
এদিকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর ব্যয়ের যৌক্তিকীকরণ। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৭ সাল নাগাদ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সব ধরনের কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হবে।
-20241004141330.jpeg)
-20241004122040.jpeg)
-20240920155109.jpeg)
