ফেসবুকে ‘অন্তিম যাত্রার পথে’ লিখে জাবি শিক্ষার্থীর ‘আত্মহনন’!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ৪, ২০২৩, ১১:৩২ পিএম

ফেসবুকে ‘অন্তিম যাত্রার পথে’ লিখে জাবি শিক্ষার্থীর ‘আত্মহনন’!

আবারও ‘আত্মহননের’ ঘটনা ঘটলো দেশের উচ্চতম বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবারের ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান সিয়াম (২৫) ‘আত্মহননের’ পথ বেছে নেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করেন তাঁর সহপাঠীরা। পরে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তারা। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

আরাফাত রহমান সিয়াম থাকতেন মীর মশাররফ হোসেন হলের বি-ব্লকের ১১৫ নাম্বার কক্ষে একা। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায়।

এর আগে গতকাল সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিটে তিনি ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। যার শিরোনাম ছিল: অন দ্য ওয়ে টু ইটারনিটি (অন্তিম যাত্রার পথে)।

যদিও তাঁর ওই পোস্টে সময় আজ ভোর রাত ৪টা ২৫ মিনিট লেখা ছিল। মরদেহ উদ্ধারের সময় তাঁর পড়ার টেবিলে সাধগুরুর ‘দ্য ডেথ’ বইটি পাওয়া যায়। তাঁর সেই পোস্টে ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা থেকে মৃত্যুকে বেঁচে নেওয়া শ্রেয় বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিয়ামকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি, তিনি আগেই মারা গেছেন। যখন তাঁর লাশ পাই, তখন তাঁর গলার মধ্যে রশি বাঁধা ছিল। ফাঁস লেগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

সিয়ামের সহপাঠীরা জানান, দুপুরের দিকে সিয়ামের কক্ষের সামনে গিয়ে কয়েকবার ডাকাডাকি করা হয়। এরপর বিকেলে আবার ডাকাডাকি করা হয়। তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে সন্ধ্যায় যখন ডাকাডাকি করা হয়, তখন কোনো সাড়া না পেয়ে জানালার গ্লাসের ওপরের কাগজ সরিয়ে ভেতরে সিয়ামকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

সিয়াম তাঁর পোস্টে আরও লিখেছিলেন: আমি চাইলেও সেটা অবর্ণনীয় যে আমি কিসের মধ্য দিয়ে গেছি। যদি সম্ভব হয়, তবে সেই আধ্যাত্মিক অনুভূতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। কত সময় কেটে গেছে জানি না। আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে আমি আবার আমার শরীরে ফিরে আসব কি না। কিন্তু যখন আমি হুঁশ পেয়েছি তখন মেঝেতে বজ্রাহত অবস্থায় আবিষ্কার করেছি। এ সময় আমি আমার শরীর নাড়াতে পারিনি, অনেকক্ষণ কিছু বলতে পারিনি। আমি শুধু এই পৃথিবীতে চিরকাল থাকতে চেয়েছিলাম। সেখানে স্থায়ীভাবে যেতে হলে হয়তো দৈহিক দেহের মৃত্যুই একমাত্র সমাধান। 

শেষে তিনি লেখেন, মানবিক সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার বাইরে একজন মানুষ ছিলেন যিনি চলে গেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ফ ফিরোজ উল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আরাফাতের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। নীলফামারী থেকে তাঁর অভিভাবকেরা রওনা দিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকার জিরানী থেকে তাঁর পরিবারের একজন সদস্য আসছেন। তিনি আসলে লাশ ও ময়নাতদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

আরাফাত সেশন ড্রপ আউট হয়ে জুনিয়র ব্যাচের সাথে কনটিনিউ করছিল। তাঁর কক্ষটি আপাতত সিলগালা করা আছে। পরিবারের সদস্যরা এলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্রের একাধিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘আরাফাত আমাদের কাছে কখনো চিকিৎসা নিতে এসেছে বলে জানা নেই।’

Link copied!