সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম
মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১ টায় চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লক থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান। প্রাথমিকভাবে তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।
কাজী ফিরোজ ২০১৯-২০ সেশনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ও চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জে।
এদিকে ফিরোজের কক্ষে তাঁর পড়ার টেবিলের ওপর রাখা একটি প্যাডে কিছু হতাশার কথা লেখা রয়েছে।
পৃষ্ঠার ওপরে তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ১/০৯/২৩। আর এর নিচে লেখা আছে— মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই।
আমারে মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’
এই লেখার নিচে মাঝ বরাবর লেখা— ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে ‘রাত: ১১টা ৩।’
পৃষ্ঠার বাকি অর্ধেকে আরও লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল— মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড 8079, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম।
আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।’
এই লেখার নিচে আবারও লেখা রয়েছে— ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’
ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং হল শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হলের ছয় বা সাততলা থেকে কোনো কিছু একটা পড়ার শব্দ হলে সবাই দৌড়ে আসে। পরবর্তী সময় রিকশা নিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত ফিরোজ কাজীর বড় ভাই ফেরদৌস কাজী বলেন, ‘আমি এলাকার একটি কলেজে অনার্স পড়তাম। ফিরোজ ঢাবিতে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ায় আমার আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। পরিবার অসচ্ছলতার কারণে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে চাকরি নিই। অনেক কষ্ট করে ফিরোজকে পড়াশোনা করাচ্ছিলাম। সেই ভাই এভাবে মারা গেল!’
কাজী ফিরোজের সাথে সম্পর্ক থাকা মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী বলে জানান তাঁর বন্ধুরা। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গমাতা হলের সামনে ওই মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে ফিরোজকে ‘অপমান’ করা হয় বলে আজকের পত্রিকাকে জানান বঙ্গমাতা হলের একাধিক শিক্ষার্থী।
সার্বিক বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দুজন শিক্ষকের মাধ্যমে ফিরোজের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনি কোনো পদক্ষেপ পরিবার নিবে কি না—এমন বিষয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তীকালে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হলে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’