সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ০১:২৮ এএম
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে শুরু করেন। মোটামুটি সব ক্লাসেই শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিল। ক্লাসে ছিলেন না কেবল আবু সাঈদ।
দীর্ঘদিন বন্ধের পর ক্যাম্পাসে ফিরে শিক্ষার্থীরা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে জুলাই-বিপ্লবের স্মৃতিচারণ করেন তারা। পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া শহীদ আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষক সবাই আবু সাঈদের কথা আলোচনা করেন। তারা বলেন, আবু সাঈদকে ছাড়া আজকের ক্লাস কেমন যেন দমবন্ধ লাগছিল।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলার পর শিক্ষার্থীরা হলে-মেসে ফিরতে শুরু করেন। শহীদ আবু সাঈদের রুম এখনো ফাঁকা আছে। পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না সহপাঠী ও বন্ধুরা। এই জঘন্য হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তারা।
রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন।
পরিদর্শনকালে উপাচার্য বলেন, “শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য আরও বাস কেনা হবে এবং চলাচলের রুট বাড়ানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অচিরেই শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসনে চারতলা একাডেমিক ভবনগুলোকে (চারটি ভবন) বাড়িয়ে ছয়তলায় রূপান্তরিত করা হবে। এতে কিছুটা হলেও শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট ও সমস্যা নিরসন করা হবে।”
উপাচার্য বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় নেতিবাচকভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে। আর যেন নেতিবাচক খবর না হয় সেই বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।
আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর ১৭ জুলাই থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ হতে অন্তত ৪০ জন পদত্যাগ করেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী। নবনিযুক্ত উপাচার্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নতুন করে শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং রোববার থেকে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা হয়।