ডাকসু নির্বাচন

আট বিষয়ে শপথ নিলেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম

আট বিষয়ে শপথ নিলেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

ডাকসুতে নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আচরণে গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটানোসহ আট বিষয়ে শপথ নিলেন ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।

রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বটতলায় প্রার্থীরা এই শপথ নেন। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম এই শপথবাক্য পাঠ করান।

এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ ডাকসু ও হল সংসদের বিভিন্ন পদের ২০৫ জন প্রার্থী শপথবাক্য পাঠ করেন।

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শপথপাঠ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম দফার শপথে বলা হয়, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আনন্দময়, বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো, ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেকোনো মূল্যে ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দেওয়া হবে না।

পূর্বসূরিদের মতো লড়াই চালানোর অঙ্গীকার করা হয় দ্বিতীয় দফার শপথে। এতে বলা হয়, যেভাবে তারা বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২০২৪-এর জুলাইয়ের রক্তঝরা দিনগুলোতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, যেভাবে তাদের অগ্রজেরা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তাদের পূর্বসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও সাতচল্লিশের দেশভাগের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, ঠিক একইভাবে ভবিষ্যতে যদি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বা জনগণের মুক্তির পথ আবার কোনো কালোশক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়, তারা সর্বোচ্চ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

নারীদের সুরক্ষার কথা বলা হয় তৃতীয় দফার শপথে। এতে বলা হয়, বোনদের তথা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত করা হবে। যেখানে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও সর্বোপরি ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।

বৈধ সিটের ব্যবস্থার কথা তুলে ধরা হয় চতুর্থ দফায়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সহজ-সুবিধাজনক পরিবহন ও যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে।

অনলাইন সুরক্ষা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হয় পঞ্চম দফায়। এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সুরক্ষা প্রদানের জন্য তারা সাইবার বুলিং, মিস ইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজসহ অনলাইনভিত্তিক সব ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রত্যয় জানানো হয় ষষ্ঠ দফার শপথে। এতে বলা হয়, প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে তারা শিক্ষা, গবেষণা, পড়াশোনার পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনমূলক কার্যক্রম গতিশীল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়োজিত রাখবেন। 

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয় সপ্তম দফায়। এতে বলা হয়, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তাঁরা ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখবেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ও আচরণে সর্বদা সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাবেন।

শপথের প্রতিটি শব্দ ধারণের অঙ্গীকার করা হয় শেষ দফায়। এতে বলা হয়, ‘আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে চাই যে আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী এই শপথের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে অক্ষরে মনেপ্রাণে ধারণ করি। এবং আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে প্রত্যেকের জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই প্রতিটি শপথ বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ।’ 

শপথপাঠ শেষে প্যানেলের পক্ষ থেকে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, তারা আশা করছেন, একটি সফল ডাকসুর প্রত্যাশা থেকে, একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয় থেকে শিক্ষার্থীরাও এই শপথের অংশীদার হবেন। তাঁদের প্যানেলের প্রত্যেক প্রার্থীকে শিক্ষার্থীরা মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।

আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ও প্যানেলকে ভোট দিই। আমরা সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে গড়ে তুলি একটি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও শিক্ষার্থীবান্ধব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’

নির্বাচনের আগে শপথবাক্য পাঠ করানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের ডাকসুতে আমাদের স্লোগান হলো, প্রতিশ্রুতি নয়, অঙ্গীকারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজকে শপথে আমরা যে অঙ্গীকার করলাম, নির্বাচিত হলে আমাদের প্যানেলের প্রার্থীরা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন।’

Link copied!