চাকসুর তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন ১২ অক্টোবর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম

চাকসুর তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন ১২ অক্টোবর

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদে এই সম্মেলন হয়। এতে তফসিল ঘোষণা করেন চাকসুর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচনের মোট খসড়া ভোটার ২৫ হাজার ৭৫২ জন। আগামী সোমবার এ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকার বিষয়ে আপত্তি জানানো যাবে। পরে ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা শুরু হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র নেওয়া যাবে। এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।

এরপর ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। এরপরই ভোট গণনা শুরু হবে।

তফসিল ঘোষণার এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক জাফর উল্লাহ তালুকদার, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম হোসেন হাবীব প্রমুখ। চাকসু নির্বাচন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে চাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, কয়েক দফা সংঘর্ষ ও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের কার্যালয় থাকলেও এত দিন ক্যানটিন আর কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেই ব্যবহার হয়েছে। কর্মচারীদের সন্তানদের বিয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হয়েছে চাকসুতে। ক্ষোভে গত ১ জুলাই চাকসু ভবনের নামফলকের ওপর ‘জোবরা ভাতের হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টার’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫।

গঠনতন্ত্র নিয়ে এখনো দ্বন্দ্ব

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকসু নির্বাচন নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১০ ডিসেম্বর চাকসুর গঠনতন্ত্র পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ওই কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটি পারেনি কমিটি। গত জুলাইয়ের শেষের দিকে কমিটি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রতিবেদন জমা দেয়। ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের ৫৫৯তম সভায় সংশোধিত গঠনতন্ত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর আগে চলতি বছরের ২২ মে ক্যাম্পাসের প্রায় সব ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে চাকসুর গঠনতন্ত্র পর্যালোচনার বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চাকসুর গঠনতন্ত্র কেমন হবে, সে বিষয়ে মতামত দেন শিক্ষার্থীরা। তবে গঠনতন্ত্রের অনুমোদন দেওয়ার পর ১২ আগস্ট তার সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। একই আপত্তি তুলে বামধারা শিক্ষার্থীদের সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট, ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।

ছাত্রদল এই গঠনতন্ত্রকে নারীবিদ্বেষী বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি সংগঠনটি এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের চাকসুতে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি করেছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট চাকসুকে উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল ও নতুন পাঁচটি পদ যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। আর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠনতন্ত্র সংস্কারের পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেছে। 

Link copied!