যদি শুনতে পান ইসলামের পুণ্যভূমি হিসেবে খ্যাত আরব দেশ ও মুসলিম বিশ্বের স্কুলগুলো রোজার মাসে মাত্র ৩/৪ দিন ছুটি থাকে? নিজের দেশের ব্যবস্থাকে কী তখন অধিক বেশি ধর্মপ্রাণ মনে হবে? যেটাই মনে করুণ দর্শক, সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।
সৌদি আরব
ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে যে দেশে, সৌদি আরবে এই বছর রোজায় স্কুল বন্ধ হবে মার্চের ২৮ তারিখ। সেখানে বাংলাদেশে হচ্ছে দেশটির স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকে।
তবে মার্চের ২৮ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলা সৌদি আরবের ছুটি যে শুধু ঈদের ছুটি তা নয়। এর মধ্যে আছে বসন্তকালীন ছুটিও, খবর এরাবিয়ান টাইমস এর।
গত বছর, সৌদি আরব বেসরকারী এবং অলাভজনক খাতের জন্য চার দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল।
বাংলাদেশের চেয়ে দেরিতে ছুটি দিলেও রোজার মাসে রাজতন্ত্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচ ঘন্টা স্কুল করার সময় বেঁধে দিয়েছে।
রোজা পালনকারী শিক্ষার্থীদের যাতে শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে অংশ নিতে না হয়, আর হোম ওয়ার্ক ও রিভিশনের পড়া যেন কম পরিমানে দেওয়া হয় সে বিষয়ে স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য দেশ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে রমজানে ছুটি মাত্র ২ দিন, পাকিস্তানে ৩ দিন। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে পুরো রমজান মাসজুড়ে ছুটি নেই। তাছাড়া বাংলাদেশে এক সময় শবে-কদর থেকে ঈদ পর্যন্ত ছুটি থাকত। তখন তো সমস্যা হয়নি, কেউ আপত্তিও করেনি।
মাউশি ডিজির বক্তব্যকে আমরা যাচাই করার চেষ্টা করেছি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব দেশগুলোয় অন্তত ২ সপ্তাহ করে ছুটি ছিল ঈদুল ফিতর কে কেন্দ্র করে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম খালীজ টাইমস উল্লেখ করেছে, এই সুবিশাল ছুটির মধ্যে সিমেস্টার ব্রেক ও বাসন্তকালীন ছুটি একসাথে রয়েছে। আগের বছরগুলোতে রোজার মাসে স্বল্পদিনের ছুটির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আরব দেশ ক্লাসেরও সময় কমিয়ে এনেছে।
ওপেন সোর্সে পাওয়া কিছু তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ও তুরস্কে এপ্রিল ১০ থেকে এপ্রিল ১২, ৩ দিন ছুটি। মিশরে এপ্রিল ৮ থেকে এপ্রিল ১৪, এক সপ্তাহ ছুটি।
মালয়েশিয়াতে এপ্রিল ৭ থেকে এপ্রিল ১২ পর্যন্ত ৬ দিন ছুটি।
বাংলাদেশে ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে ২১ মার্চ পর্যন্ত। সৌদি আরবের আগে বন্ধ করেও কর্তৃপক্ষকে পোহাতে হয়েছে অনেক দিকের অনেক চাপ।
পুরো রোজার মাসজুড়ে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার দাবিতে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে রমজানের প্রথম ১৫ দিন দেশের সকল নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখার কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
এই দুই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়, এবং সেই রিটের শুনানিতে রোজায় স্কুল বন্ধ রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট।
তবে হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদনের শুনানিতে অংশ নিয়ে রোজার মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
অর্থাৎ আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে ২১ মার্চ পর্যন্ত।
কেন ছুটি কমানোর তৎপরতা?
বর্তমান শিখনকাঠামোতে ১৮৫ দিনের বেশি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার হিসেব ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় পরের বছর থেকে ছুটি কমতে পারে স্কুলগুলোয়।
উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের কারণে ছুটি দিলে সেখানে শিখনঘণ্টা কমে যায়, বেশি শীত পড়লে ছুটি দিলে শিখনঘণ্টা কমে যায়; এসব কারণে শিখন ঘণ্টা হিসাব করে ১৮৫ দিনের বেশি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষাপঞ্জিকা করা হতে পারে। আর তাই এ বছর রোজায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০ দিন এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ থাকলেও আগামীতে রমজানে এ ছুটি আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।