জাবিতে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম

জাবিতে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে হলে আটকে রেখে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস-ধর্ষণ বন্ধ করো, রুখে দাঁড়াও’, ‘সারা দেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’ ‘বাংলার মাটিতে ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘নারীর ওপর সহিংসতা বন্ধ করো’, ‘নারীর চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’, ‘জাবিতে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চরম ন্যাক্কারজনক ধর্ষণের ঘটনার নিন্দাজ্ঞাপন ও দোষীদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তিপ্রদানের দাবিতে আজকের এই মানববন্ধন। দেশের কোনো ক্যাম্পাসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে। শুধু ক্যাম্পাস নয়, সারা দেশেই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের জ্ঞানচর্চার মেরুদণ্ড। সেখানে যখন এমন ঘটনা ঘটে তখন তা দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, সব দোষীর গ্রেপ্তার এবং বিচার চাই। আমরা মনে করি, নারীর ওপর এই সহিংসতার পেছনে মূল কারণ নারীর ওপর পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সন্ত্রাস-সহিংসতাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা। যে সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো এ ধরনের চর্চা করে আমরা তার বিরোধী। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করছি। সব ধরনের লিঙ্গগত বৈষম্য ও সহিংসতার বিরোধিতা জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। এর প্রেক্ষিতে মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ ঘটনার পর অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া হল থেকে অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে অন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান।

তাদের মধ্যে হাসানুজ্জামান বাদে বাকি সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। তবে আরেক অভিযুক্ত বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫) পলাতক রয়েছেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করায় অভিযুক্ত মুরাদ ও শাহ পরান নামে আরও দুজন পলাতক রয়েছেন।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ওই দম্পতিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনে মামুন। পরে তার স্বামীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। পরে স্বামীর কাছে নেওয়ার কথা বলে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির পর গতকাল শনিবার রাতে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহ পরানের সনদ স্থগিত এবং মো. মুরাদ হোসেন, সাগর সিদ্দিকী, সাব্বির হাসান সাগর ও হাসানুজ্জামানের সনদ স্থগিত এবং সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া তাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

Link copied!