মার্চ ৪, ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ মার্চ)। যা আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
ভর্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসবেন রাজশাহীতে। কিন্তু, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তুলনায় রাজশাহীতে হোটেলের সংখ্যা অপ্রতুল।
শহরের আবাসিক হোটেলগুলোর যা ধারণক্ষমতা রয়েছে, তা এর মধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে। কোনো হোটেলেই মিলছে না রুম। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম আবাসিক সংকটে পড়েছেন। এই সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে প্রতি বছরই আবাসন সংকটে পড়তে হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। পরীক্ষা দিতে এসে থাকতে হয় বিভিন্ন আবাসিক হলের রিডিংরুম, পেপাররুম, গেস্টরুম, টিভিরুম ও মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরসহ অনেক স্থানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান অনেকেই।
অন্যদিকে রাজশাহীর মেসগুলোতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের থাকতে হলে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। ফলে আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পেরে বাধ্য হয়ে অনেকেই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে আসেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এবার ভর্তি পরীক্ষায় কোটাবাদে ৩ হাজার ৯০৪টি আসনের বিপরীতে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। যা গতবারের তুলনায় ৭ হাজার ১০৬ জন বেশি। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৭৪ হাজার ৭০০জন, ‘বি’ ইউনিটে ৩৪ হাজার ৫০০ জন এবং সি ইউনিটে ৭৬ হাজার ৩০০জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। আগামী ৫ মার্চ ‘সি’ ইউনিট (বিজ্ঞান), ৬ মার্চ ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) এবং ৭ মার্চ ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহীতে ছোট-বড় ৬০ থেকে ৬৫টি হোটেল রয়েছে। এতে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ভর্তি পরীক্ষার সময় হোটেলের একটি কক্ষ হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার সপ্তাহখানেক আগেই বুকিং দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন আর তেমন কোথাও রুম ফাঁকা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রানা রায়। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘এবার ভর্তি পরীক্ষায় আমার এলাকা থেকে পাঁচজন ভর্তিচ্ছু ও তিনজন অভিভাবক আসবেন। হলে নিজ কক্ষে সর্বোচ্চ তিনজনকে রাখা সম্ভব হলেও, বাকিদের রাখার জন্য রুম খুঁজে পাচ্ছি না। দুই দিন ধরে শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে ঘুরছি, কিন্তু হোটেলে সিট ফাঁকা নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না।’
এদিকে রাজশাহী শহরে মেস রয়েছে ৫ হাজারের মতো। মেসগুলোতে একজন ছাত্র সর্বোচ্চ একজন পরীক্ষার্থীকে বিনামূল্যে রাখতে পারবেন। এর বাইরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রতি মেসভেদে গুনতে হবে ৩০০-৫০০ টাকা।
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা মেসে থাকেন, তারা একজন করে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীকে বিনামূল্যে রাখতে পারবেন। এছাড়া যদি অভিভাবক থাকেন, তাহলে ৩০০-৫০০ টাকা দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা এটা মেস মালিকের সঙ্গে সমন্বয় করে নেবেন।’
রাজশাহী মহানগর আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার হাসান কবির বলেন, ‘রাজশাহী শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০-৬৫টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এতে দেড় থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব হবে। যা বর্তমান প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আর এই রুমগুলোও সপ্তাহ খানেক আগেই বুক হয়ে গেছে। বর্তমানে কোন হোটেলেই সিট খালি নেই।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় যে বিপুল লোকজনের আগমন ঘটবে, তাদের তুলনায় রাজশাহীতে যথেষ্ট আবাসনসংকট রয়েছে। আমরা হোটেল ও মেস মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা হয়রানির শিকার না হন। তাছাড়া আমাদের আবাসিক হলগুলোতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা থাকতে পারবেন। যতটুকুই আবাসন রয়েছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে, এই সংকট অনেকটা নিরসন করা সম্ভব হবে।’