ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১২:৫৫ এএম
কিছু দিন ধরেই উত্তাল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণগুলো।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের ওপর স্বাগতিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দল কর্তৃক হামলার অভিযোগ ওঠে।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন ও ক্লাসরুম সিলগালা কর্মসূচি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট ফাইনাল প্রতিযোগিতা চলাকালে নিরাপত্তা বেষ্টনী উপেক্ষা করে মাঠে প্রবেশ করে সমর্থকেরা। প্রথম ইনিংসে ঢাবি ২০ ওভার ব্যাট করে ১৪৯ রান করে। ১৫০ রানের টার্গেটে নেমে ১ উইকেটে ১০০ রান করে রাবি। তবে শেষের দিকে পরপর উইকেট পতন হলে চাপে পড়ে দলটি। ১৭তম ওভার চলাকালে একটি বাউন্ডারি ক্যাচ নিয়ে বিতর্কের জেরে দর্শকরা মাঠে নেমে আসলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফলে উভয় দলের খেলোয়াড়দের নিজ নিজ তাবুতে আনা হয়। বিশৃঙ্খলার এক পর্যায়ে আলো স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে উভয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করে ম্যাচ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মাঠে খেলোয়াড়দের ওপর হামলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিম যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থী মাঠে ঢুকে ঢাবি ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়দের উপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হামলা চালায়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের ৫/৬জন খেলোয়াড় গুরুতর আহত হয়।
এদিকে, নিজ বিভাগের নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে ৩ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. আবুল মনসুর আহমেদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে শিক্ষার্থীরা ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সোমবার সকাল থেকে ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি নাদির জুনাইদের অফিস রুম ও বিভাগের ক্লাসরুমগুলো সিলগালা করেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের নবমতম দিনে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের কুশপুতুল সাজান।
এর আগে গত বুধবার রসায়ন বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দেন ঐ বিভাগেরই এক ছাত্রী অভিযোগে বলা হয়, থিসিস চলাকালীন সুপারভাইজার (অধ্যাপক) কর্তৃক যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হন তিনি। ল্যাবে একা কাজ করার সময় এবং কেমিক্যাল দেওয়ার বাহানায় নিজ কক্ষে ডেকে দরজা আটকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই শিক্ষক।
অন্যদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত ও অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম’। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘প্রতীকী অবরোধ’ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের’ ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সারাদেশ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন উত্তাল অবস্থার বিষয়ে দ্য রিপোর্ট লাইভের সাথে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ` প্রযুক্তির উন্নতির কারণে শিক্ষক এবং ছাত্রদের যে পারস্পরিক যোগাযোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এরকারণেই যৌন নিপিড়নের ঘটনাগুলো নিয়মিত ঘটছে বলে জানান ড. জামাল।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভ্যালুজের অবক্ষয় হয়েছে। যৌন নিপিড়ন প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কয়েকদিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এসব ঘটনাগুলো ঘটছে। তদন্তের পর দোষী সাব্যস্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন অনুযায়ী এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলেও জানান তিনি।