বইমেলার প্রাপ্তি শুধুই হাহাকার!

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০২:৪৮ এএম

বইমেলার প্রাপ্তি শুধুই হাহাকার!

বইমেলা মানেই দর্শনার্থী-ক্রেতার হুড়োহুড়ি ভিড় এমনটাই স্বাভাবিক। করোনার কারণে খুব একটা দর্শক-পাঠকের উপস্থিতি ছিল না এবারের বইমেলায়। সেই কাঙ্খিত পাঠক-ক্রেতার দেখা পাননি অধিকাংশ প্রকাশক স্টল মালিকরা। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কঠোর নির্দেশনার কারণে দর্শনার্থী এবং পাঠকদের উপস্থিত ছিল খুবই সীমিত। ফলে বই বিক্রয়ও হয়েছে সীমিত পরিসরে।

এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে বইমেলা দেড় মাস বিলম্বে শুরু হলেও তা আবার নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই শেষ হচ্ছে। সবমিলিয়ে এবারের বইমেলায় অংশ নিয়ে বাড়তি লোকসানের মুখে পড়েছেন বিভিন্ন প্রকাশক সংস্থা।

একাধিক প্রকাশকের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে লোকসান কাটিয়ে উঠতে গিয়ে বইমেলায় আরেকটা বড় লোকসানে পড়েছেন তারা। এমন অবস্থাতে প্রণোদনা এবং আন্তরিকভাবেপাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি তারা আহবান জানান। এছাড়া প্রকাশনা ব্যবসা টিকিয়ে রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

নালন্দা প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী জুয়েল রেদোয়ানুর জানান, ‘আমার প্রকাশনা বিনিয়োগ ৩৫ লাখ টাকা প্যাভিলিয়ন, স্টাফ এবং আনুষাঙ্গিক মিলিয়ে মোট ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রি হয়েছে মাত্র ১লাখ ৭৬ হাজার টাকা। মাঝপথে দশ জন বিক্রয় প্রতিনিধিকে বিদায় করতে বাধ্য হয়েছি।’ রেদোয়ানুরের মত আরও অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের হতাশা কথা  ব্যক্ত করেন।

জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ প্রকাশনীর কর্ণধার কমল কান্তি দাস বলেন, ‘আমার ৩৫ টা বই প্রকাশ করার কথা। এরমধ্যে দশটা প্রকাশের পর বাধ্য হয়ে অন্যান্য বই বন্ধ রেখেছি। অনেকেই স্টল বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই ক্ষতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’

তিনি বলেন, ‘লকডাউনে বইমেলা খোলার সময়সীমা যদি সন্ধ্যার পর হতো তবে কিছু মানুষ অফিস শেষ করে আসতে পারতো মেলাতে। এখন এই লোকসানে নিয়ে কীভাবে টিকে থাকবো তাই ভাবছি। এই আর্থিক ক্ষতি আমাদের সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলবে মারাত্বকভাবে।’

এই বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক বলেন, ‘সামগ্রিক ক্ষতি বিষয়ে পরিপূর্ণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। তবে কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’

এমন অবস্থায় প্রণোদনা বিষয়ে সমিতির পরিকল্পনা জানতে চাইলে মনিরুল হক বলেন, ‘আমরা সরাসরি কোন প্রণোদনা চাইছি না। আমাদের একটাই জোরালো দাবি সরকারি বই কেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তালিকা করে যেন পেশাদার প্রকাশকদের বই কেনা হয়। আমলাতান্ত্রিক অপেশাদার লোকদের বই সরকারি উদ্যোগে কিনে আমাদেরকে যেনো বিপদে ফেলে না দেয়া হয়।’

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বইমেলা আয়োজন করার রেওয়াজ থাকলেও করোনার প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় এইবছর বইমেলার ৩৭তম আসর গত ১৮ মার্চ শুরু হয়। এরমধ্যে গত শনিবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন করোনার সংক্রমণ বাড়ায় নির্ধারিত সময়সীমা দু'দিন সংকুচিত হয়েছে। আগের সময় অনুযায়ী গ্রন্থমেলা চলার কথা ছিল আগামী ১৪ তারিখ পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত।

করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ৫৪০টি স্টল,৩৩টি প্যাভিলিয়ন এবং ১৩৫টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল নিয়ে শুরু হয়েছিল এবারের বইমেলা। মহামারি করোনাভাইরাস দ্বিতীয় মেয়াদে ভয়ংকর রূপে ফিরে আসায় ৩১ মার্চ বইমেলার সময়সীমা কমিয়ে সাড়ে তিন ঘন্টা করা হয়।

পরে ৪ এপ্রিল এক সরকারি প্রজ্ঞাপণে ঘোষণা করা হয় লকডাউনে বইমেলা স্থগিত হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে ল ডাউনের সময় বইমেলা খোলা থাকবে দুপুর ১২ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

Link copied!