নিখোঁজ হবার ৯ দিন পর রবিবার (২৩ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের মর্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইম একশনের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের লাশ পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানী এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেন, "গত কয়েকদিন থেকে হাফিজুর রহমান নিখোঁজ ছিলেন। আজকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে একটি অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আমরা তাকে হাফিজুর রহমান হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। "
আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ইতোমধ্যে নিহতের পরিবার আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়েছে, আমরাও পুলিশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দিয়েছি।"
গলায় ৫ ইঞ্চি ক্ষত
হাফিজুর রহমানের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা ছিল। পরে ছবির সঙ্গে মিলিয়ে লাশ শনাক্ত করা হয়। মর্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় ৫ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি কাটা দাগ রয়েছে। কাটা দাগ থেকে রক্ত বের হয়ে পুরো শরীর ভিজে যায়। ডান হাতের বাহুর নিচে পাশাপাশি দুটি ছেলা জখম রয়েছে। এছাড়া কনুইতেও জখম পাওয়া যায়।
ঢাকা মেডিকেল মর্গের প্রতিবেদন।
আত্মহত্যার মামলা হয় থানায়
শাহবাগ থানার ওসি মামুনুর রশীদ বলেন, "গত ১৫ই মে শনিবার হাফিজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে এসে আমাকে মাফ করে দাও! আমাকে মাফ করে দাও! বলতে বলতে এসে ওখানকার ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলায় চালিয়ে দিয়ে দৌড়ে মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনে চলে যায়। সেখান দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেয়ার সময় সে চলন্ত রিকশা থেকে লাফ দেয়। ডাক্তার তার চিকিৎসা করা অবস্থায় সে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনায় তখন আত্মহত্যার মামলা করা হয়।"
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন।
পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"তার পরিবার বা বন্ধু মহলের কেউ অভিযোগ করলে সেই আলোকে তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
খালি গায়ে ছিল জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা
ঢাকা মেডিকেলের সামনে ডাব বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্টকে জানায়, ডাবের দোকান থেকে দা নিয়ে গলায় ধরে। আমি ভয় পেয়েছিলাম তখন। তখন তার পরনে শুধু হাফ প্যান্ট ছিল। গলায় পোচ দিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়া সময় দুজন পুলিশ তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।
ডাব বিক্রেতা
হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা নার্গিস বেগম নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “ওইদিন বৃষ্টির সময় যখন সবাই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন ডাবের দোকান থেকে দা নিয়ে নিজেই নিজের গলা কাটতে কাটতে দৌঁড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে উপস্থিত সবাইকে সরিয়ে দেয়।”
এ বিষয়ে ঘটনার দিন তার সাথে থাকা বন্ধু বাপ্পি বলেন, ওইদিন হাফিজ কার্জন হলে বসে আমার সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময় তাকে অনেক বিচলিত দেখাচ্ছিলো। হঠাৎ সে ঐখান থেকে উঠে দৌড় দেয়। তখন আমরা তার পিছন পিছন দৌড়ে কেউ তাকে পাইনি। তিনি আরো জানান, ওইদিন হাফিজুরের পরনে ছিলো কালো প্যান্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লগো যুক্ত একটি টিশার্ট।
আত্মহত্যার কথা পরিবারের অস্বীকার
হাফিজের বড় ভাই মাসুম বলছেন, এটি আত্মহত্যা হতে পারে না। ও যে মানসিক সমস্যা কিংবা মদ্যপ অবস্থায় ছিল এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। পরিবারের সঙ্গে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করে ক্যাম্পাসে গিয়েছে। এটা আত্মহত্যা হতে পারে না।
মুকাভিনেতা ছিলেন হাফিজুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুরের লাশ শনাক্ত করেছে তার পরিবার ও স্বজনরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন হাফিজুর। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইম একশনের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বরত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইম একশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাফিজুর রহমান।
ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফেরা আর হয়নি
গত ১৫ মে ঈদুল ফিতরের পরদিন দুপুরে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে হাফিজুর। বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল এলাকায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে রাত ৮-৯ টার দিকে তার নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। পরে তার বন্ধুরা তাকে বিদায় দিলে তারপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছিলেন তার স্বজন। হাফিজুরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায়। এর আগে নিখোঁজের ঘটনায় তার মা সামছুন নাহার গত শুক্রবার কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি ন. ১২৮৩।