ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩, ০২:০৫ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২২ ডিসেম্বর ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে তরুণদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
এ আয়োজনে তরুণদের রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রশ্নের পাশাপাশি জলবায়ু ঝুঁকি ও বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কী করার আছে আর যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী ? - তরুণদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯-এ সরকারে আসার পর কোপ-১৫-এর কোর কমিটির সদস্য ছিলাম আমি। ওখান থেকে আসার পরই আমরা নিজস্ব একটা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি এবং অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশন প্রোগ্রাম করে আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। সেইসাথে আমরা মুজিব বর্ষে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান আমরা করেছি। এই যে ড্যামেজ হবে ড্যামেজ হবে আমরা বলছি। এই ড্যামেজ কীভাবে উন্নয়নে নিয়ে আসব আমরা সেই চেষ্টা করি। আমরা আইন ও নীতিমালা করে দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। যেমন সমগ্র উপকূল অঞ্চলে গ্রিন বেল্ট করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আর যতগুলো প্রজেক্ট নিই সবগুলোতে আমরা সবগুলোতে কিন্তু বৃক্ষরোপণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার দলের পক্ষ থেকে ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে একটি প্রোগ্রাম করে আসছি সেটা হলো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। ১৫ জুন বা পয়লা আষাঢ় থেকে পরবর্তী তিন মাস আমাদের দল ও সহযোগী দলের প্রত্যেকের ওপর নির্দেশ থাকে অত্যন্ত তিনটি করে গাছ লাগাবেন। এই প্রোগ্রামটা আমাদের নিজেরই। আমাদের অনেকগুলি প্রোগ্রাম কিন্তু নেওয়া আছে এবং নীতিমালা বিধিমালা আইন আমরা পাস করেছি।
সরকার প্রধান আরও বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, কোভিড অতিমারি, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আমি আমার তরুণ সমাজকে বলব যে আমাদের এক ইঞ্চি জমি খালি থাকবে না। যার যত পতিত জমি আছে সেগুলো চাষ করবে। সেখানে ফসল উৎপাদন হবে। যে যা পারে উৎপাদন করবে। যে যা পারে খাবার জিনিস তৈরি করবে যেন আমাদের যেন আমাদের কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আমি যখন করি আমি কিন্তু নিজেরটা আগে করি। যেমন আমার গণভবন কিন্তু রীতিমতো একটা খামারবাড়ি। পাশাপাশি আমার গ্রামের বাড়িতে যে পতিত জমি ছিল সেগুলোতে ফসল ফলাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু ইস্যুতে অনেক প্রমিস করা হয়। কিন্তু যারা আসলে ডেভেলপ হয়েছে যারা সবচেয়ে বেশি দূষণ করে তারা খবরদারি করে অন্যের ওপর। আমাদেরতো কার্বন কার্বন নিঃসরণ নেই। তারপরেও আমরা সচেতন। প্রতিশ্রুতি পাই অনেক, তবে কার্যকর কতটুকু হয় সেটাই দেখার বিষয়। তবে যারা দূষণ করে তারা বেশি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় না। আমাদের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ছোট ছোট দ্বীপগুলো। সি-লেভেল উঠে গিয়ে অনেক দেশই শেষ হয়েছে। তাদেরও আমরা আমাদের অ্যাডাপটেশন প্ল্যান এ ধারণাগুলো দিই। আমি তাদের বলি আপনাদের দেশের অবস্থাটা বুঝে আপনারা আপনাদের নিজেদের দেশের সুরক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
আরও পড়ুন: নারী, তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কী ভাবছে সরকার; প্রশ্ন তরুণদের
বৃক্ষরোপণে উৎসাহ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের যুব সমাজকে বলব যে যেখানে পারবেন একটি করে গাছ লাগাবেন। আমাদের যুব সমাজের কাছে এটাই আমার আহ্বান থাকবে যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে আর উৎপাদন করতে হবে। কারোর থেকে যেন আমাদের হাত পেতে চলতে না হয়।
ট্যুরিজম সেক্টর নিয়ে সরকারের কোনো বড় পরিকল্পনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চা বাগান থেকে শুরু করে আমাদের সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে দীর্ঘ একটা সমুদ্র সৈকত। এটা হচ্ছে স্যান্ডি বিচ। বালুকাময় এই সৈকত ডেভেলপ করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। কক্সবাজার নিয়ে আমার ইচ্ছা আছে আমরা যদি বিদেশি পর্যটক আনতে চাই সেটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা। আমার একটা প্ল্যান আছে যে আমরা বাইরের কোন দেশকে একটা অংশ দেব তাঁরা ওখানে ইনভেস্টমেন্ট করবে। সেটা শুধু বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাহলে বিদেশি পর্যটকরা আমাদের দেশে আসবে। এখনও আসে কিন্তু তারা ওই সুযোগটা পায় না।
আরও পড়ুন: তরুণদের আগ্রহ: ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনার যাপিত জীবন
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নেপালের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। আমরা একটা যৌথভাবে কীভাবে ট্যুরিজমটা উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি। এমনকি মালদ্বীপের সাথেও আমরা নৌ ভ্রমণের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা করে যাচ্ছি তবে আমাদের আরও পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। আর তোমদের মতো তরুণ প্রজন্মরাও এ নিয়ে ধারণা দাও। তোমরা পরিকল্পনা করবা আমি সেটাই চাই।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) উদ্যোগে ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানের ৫২তম আসরটির ভিডিওটি বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সিআরআই ও ইয়াং বাংলার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সম্প্রচার করা হয়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণ সংগঠক এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এমন তরুণদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নোত্তর-আলোচনার পাশাপাশি তরুণদের পরামর্শ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চেইঞ্জমেকার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফ্লুয়েন্সারও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।