ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৩:২১ এএম
গত ২২ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে তরুণদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আয়োজনে দেশ-রাজনীতি-বিশ্ব নিয়ে প্রশ্ন, মতবিনিময়ের পাশাপাশি ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনা এবং ‘ব্যক্তি’ শেখ হাসিনার সম্পর্কে জানতেও তরুণদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী হলে তরুণরা কী করতেন সে বিষয়েও আলোচনা হয় এই অনুষ্ঠানে।
তরুণরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘সময়ের ব্যবস্থাপনা’ কোন ‘ম্যাজিকে’ করে থাকেন?”
তরুণদের এই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ম্যাজিক কিছু নেই। ব্যাপারটি হলো সময় করে নেওয়া। কাজের ফাঁকেই সময় করে নিতে হয়। হ্যাঁ ব্যস্ত খুবই থাকতে হয়। আমাকে ১৭ কোটি মানুষের দায়িত্ব নিতে হয়। এছাড়া ডেভেলপমেন্টের কাজ হাতে নিয়েছি সেগুলো করতে হয়। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যস্ততাও রয়েছে। এর মধ্যে আমার দল, সব সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকে। এই যে এখন যেমন সারাক্ষণ একটা টেনশনে থাকতে হয় জ্বালাও-পোড়াও নিয়ে। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁদের চিকিৎসা করে যাচ্ছি। আবার পরিবারগুলোকেও সহায়তা করতে হয়। সময় করে নিতে হবে। তরুণ সমাজের প্রতি একটা কথাই বলব নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা।’
হতাশার সাথে মোকাবিলা কীভাবে করা যায় এ বিষয়টিও তরুণদের প্রশ্নে উঠে আসে। হতাশা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী তরুণদের পরামর্শ দেন আত্মবিশ্বাসী হওয়ার। তিনি বলেন, ‘এখন কোনো কিছু হলেই শুনি বোর হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সময় এমন ছিল না। আসল কথাটা হলো আত্মবিশ্বাস। আরেকটা বিষয় হলো ডিজিটাল যুগ। আমরা যদি পাঁচজন এক জায়গায় বসি দেখা গেল সবাই হাতে একটা মোবাইল নিয়ে বসে আছি। এর কারণে বাইরের জগত চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে হতাশা বাড়ছে। আমরা যখন যে কাজটা করব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করব। যাই করব নিজের বিশ্বাস নিয়ে করতে হবে। সেই কাজে আমি যদি সফল না হই তবুওতো আমি আমার চিন্তায় করলাম। এভাবে চিন্তা করলে হতাশ হবে না।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু ঝুঁকি ও পর্যটন নিয়ে ভাবনা তরুণদের জানালেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর গ্রামের জীবনযাপন নিয়েও তরুণদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায়। তরুণরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি কি গ্রামে থাকতেন? সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার জন্ম গ্রামে। আমাদের গ্রাম টুঙ্গিপাড়া যেতে ঢাকা থেকে যেতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা লাগত স্টিমারে। আমি ৮ বছর পর্যন্ত গ্রামেই ছিলাম। ৫৪ সালে ঢাকা আসি। তবে প্রত্যেক স্কুল ছুটিতে গ্রামে যেতাম। তখন বিদ্যুৎ ছিল না, খাল পুকুরের পানি ব্যবহার করতাম। ওগুলোই আমাদের জন্য আনন্দের ছিল। আমার ঢাকায় কোনো বাড়িঘর নেই। আমি গ্রামেই থাকব। এখনতো পদ্মাসেতু হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি চলে যাব।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় খাবার এবং প্রিয় রান্না সম্পর্কে জানতেও তরুণ সমাজের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষে মতো বাইরে খেতে যাওয়া কি সম্ভব হয় কি না এই বিষয়টিও প্রশ্নে উঠে আসে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘আমাকে সিকিউরিটির নামে বন্দি করে রাখে। আমি বলতে পারব না যে ঢাকার কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে যেতে পারছি বা খেতে পারছি। এমনকি বাইরে গেলেও একই অবস্থা দাঁড়ায়। আর রান্নার বিষয়ে বলতে গেলে আমার ছেলে মেয়ে নাতিরা আমার রান্না পছন্দ করে। সেইজন্য চেষ্টা করি রান্না করতে। তারা আসলে মোরগ পোলাও রান্না করি, মাছ রান্না করি। এছাড়া ইতালিয়ান পিজ্জা,লেজানিয়া এগুলোই করি।’
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার জীবন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি ‘তরুণরা প্রধানমন্ত্রী হলে কী করত? এই প্রশ্নের উত্তরও দেন অনেকে।
পেশায় প্রকৌশলী সুভাশিষ ভৌমিক বলেন, ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম মেধাবীদের দেশে ধরে রাখার জন্য এমন প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দিতাম এবং প্রণোদনা রাখতাম যাতে দেশে এসে কাজ করলে এরা বড় রকমের সুবিধা ভোগ করত এবং দেশে থাকত এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করত।’
পেশায় উপস্থাপক ও ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিস অর্ডারের শিক্ষার্থী সাদিয়া রশ্মি সূচনা বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হলে এই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করব যাতে সাধারণ মানুষের সাথে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের সবখানে অগ্রাধিকার পায় এবং তাদের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকা আসতে না হয়।’
আরও পড়ুন: নারী, তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কী ভাবছে সরকার; প্রশ্ন তরুণদের
পথশিশুদের ‘মজার স্কুল’-এর পরিচালক আরিয়ান আরিফ বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হলে পথশিশুদের জন্য যে বরাদ্দ আসে সেটা এমন একটা প্ল্যানিং করতাম যাতে দশ বছর পরেও নিখুঁতভাবে চলবে এবং এমন একটা রিপোর্টিং সিস্টেম করতাম যেখানে সব দায়িত্বশীলরা রিপোর্ট দিতে বাধ্য থাকতে যে কী পরিমাণ ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে এই পথ শিশুদের। তারা মূল স্রোতে কতটা যুক্ত হয়েছে। দেশে যে বোঝা হতো সে কীভাবে সম্পদে পরিণত হয়েছে।’
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) উদ্যোগে ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ শিরোনামে লেটস টক অনুষ্ঠানের ৫২তম আসরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণ সংগঠক এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এমন প্রায় ৩০০ তরুণ অংশগ্রহণ করেন। চেইঞ্জমেকার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফ্লুয়েন্সারও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। এই অনুষ্ঠানের ভিডিওটি বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সিআরআই ও ইয়াং বাংলার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সম্প্রচার করা হয়।
আর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ আয়োজিত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও তরুণদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় যা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রণকৌশল হিসেবেই পরিচিত।