বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনে যুবলীগ সভাপতি

দায়সারাভাবে গাছ লাগাবেন না, গাছের পরিচর্যাও করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২৩, ২০২৩, ০৪:০৭ এএম

দায়সারাভাবে গাছ লাগাবেন না, গাছের পরিচর্যাও করতে হবে

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানো ও এর পরিচর্যার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের  প্রতি আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, “শুধু গাছ লাগালেই চলবে না, গাছের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। গত ২ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ১ কোটিরও বেশি বৃক্ষরোপণ করেছি। এবারও আমাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্থানে কাজী বশির মিলনায়তন (মহানগর নাট্যমঞ্চ) প্রাঙ্গণে যুবলীগ আয়োজিত দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

অনুষ্ঠানে বিএনপির সমালোচনা করে উদ্বোধক ও সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান  বলেন, “বিএনপি-জামাত সম্পূর্ণরূপে একটা জনবিচ্ছিন্ন ও সন্ত্রাসী দল, যারা মানুষ হত্যা করতে সিদ্ধহস্ত। ১৯৭১ এ জামাত গণহত্যা চালিয়েছে বাঙালির উপর, ৭৫ এ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু পরিবারের উপর বেপরোয়া হত্যাকাণ্ডের হোতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। ৭৮ থেকে ৭৯ তেও হত্যাকাণ্ড সমূহেরও হোতা জিয়াউর রহমান।”

২০০১ সালে জোট বেধে বিএনপি-জামাত আওয়ামী লীগ নিধনে নেমে হত্যাকাণ্ড-চালিয়েছে উল্লেখ করে শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রায় ২৫ হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হত্যা করেছে। আর ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের কুখ্যাত জঙ্গি-সন্ত্রাসী জোট সরকারের অনেক নেতাকর্মী হত্যা করেছে। তাই খুন, হত্যার রাজনীতি যাদের উদ্দেশ্য এবং অভিলাস তাদের ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ক্ষমতা দখল করার জন্য বিএনপি মরিয়া হয়ে গেছে উল্লেখ করে দলটির উদ্দেশ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন,“ এরা শুধু হত্যা, ক্যু এবং সন্ত্রাসই করতে জানে, জনগণের জন্য কিছু করার মুরোদ নেই। আমি তাদেরকে বলবো, এখনো সময় আছে মানুষের পাশে দাঁড়ান, গঠনমূলক রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন, তা না হলে এদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনারা পালানোরও পথ খুঁজে পাবেন না।”

শেখ ফজলে শামস্ পরশ এসময় আরও বলেন, “আপনাদের এক শীর্ষ নেতাতো ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। আর এক সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ নেত্রীও পালানোর পথ খুঁজছেন বিভিন্ন অজুহাতে। আপনাদের এই সকল নিম্নমানের রাজনীতি আজকের প্রজন্ম বুঝে। তাই এদেশের জনগণ আপনাদের সাথে নেই এবং একারণেই আপনারা এখন পর্যন্ত সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।”

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সারাদেশের যুবলীগের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাবো যে, এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিতে। নামে মাত্র দায়সারাভাবে গাছ লাগাবেন না, গাছের পরিচর্যাও প্রয়োজন।”

এসময়  তিনি আরও বলেন,“মনে রাখবেন, শুধু গাছ লাগালেই চলবে না, গাছের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। গত ২ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ১ কোটিরও বেশি বৃক্ষরোপণ করেছি। এবারও আমাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “সরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় সারাদেশে ৫২ হাজার একর বনভূমি এবং উপকূল বরাবর ৪০,০০০ একর বনভূমি তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় ১৩,০০০ একর জমিতে নতুন বন তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১৫,০০০ হাজার এক জমিতে নতুন বন তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, “আমরা এখন বিভিন্ন সভা-সেমিনারে পরিবেশ নিয়ে কথা বলি, নানা ধরণের সচেতনতামূলক প্রচারণা চালায়। কিন্তু আমাদেরকে এই পথ দেখিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত কর্মসূচি করেছেন, পরিবেশ সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করেছিলেন।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমরা নিজেদের অর্থ-সময় ব্যয় করে এই বর্ষার মৌসুমে প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ করে থাকি। করোনার মহামারির সময়ও বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের পরিবেশের কথা ভুলে যাননি। তিনি নেতা-কর্মীদের অন্তত ৩টি করে গাছ লাগানোর নির্দেশনা দেন। যার ফলে সেই সময়ে সারাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। গত ২ বছরে ১ কোটিরও অধিক বৃক্ষরোপণ করেছে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। আমরা যখন বৃক্ষরোপণ করার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করছি তখন দেশবিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী শত্রুরা বিএনপি-জামাত পরিবেশ ধ্বংসে মত্ত হলো।”

তিনি বলেন, “ ২০১৩-২০১৪ সাল বিএনপি-জামাত একদিকে মানুষেকে পুড়িয়ে মারলো, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিলো, অন্যদিকে হাজার হাজার গাছ কেটে রাস্তার উপর ফেলে রাখলো, বৃক্ষনিধন করলো। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন করোনার সময় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সহায়তা করেছি, ফ্রি-অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে, অক্সিজেন দিয়ে, খাদ্য দিয়ে। অন্য দিকে বিএনপি-জামাত করোনার সময় মানুষের পাশে না গিয়ে, খাদ্য সহায়তা না দিয়ে, ৩১ কোটি টাকা দিয়ে লবিষ্ট নিয়োগ করেছে দেশের বিরুদ্ধে। এটাই বিএনপির চেহারা।”

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আজকে সেন্টমার্টিন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন; শেখের বেটি দেশ বিক্রি করে, সেন্টমার্টিন বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকতে চান না। আমরা এদেশের মানুষকে ভালোবাসি, এদেশের মানুষই আমাদের শক্তি। যারা দেশ নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে যুবলীগ।”

Link copied!