ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খানকে একসময় পশ্চিমের সাংবাদিক-বিশ্লেষকরা দেখতেন অক্সফোর্ডে পড়া একজন রমণীমোহন প্লেবয় হিসেবেই। সেই ইমরান খানের জীবনে এসেছে বহু নারী।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাড়ে তিন বছর রাজত্ব করেছেন ইমরান খান। ক্রিকেটের মাঠে যেমন দুর্দান্ত খেলে বাজিমাত করেছেন, রমনীদের মন হরণের ক্ষেত্রেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ঠিক তেমনই বাজিমাত করেছেন রাজনীতির মাঠেও।
তারকা ইমরান খানের ব্যাক্তিগত জীবন তাঁর ক্যারিয়ারের মতোই বর্ণময়। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন প্রেয়সীরা। নানা সময়ে তাঁর নানা বান্ধীকে নিয়ে জড়িয়েছেন নানা বিতর্কেও।
৪১ বছর বয়সে ইমরানের ‘প্লেবয়’ পরিচয় আলোচনায় আসে। ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ তরুণী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন। তাদের দুইটি ছেলেও হয়। ছেলেদের নাম সোলাইমান ও কাসিম। তবে, নয় বছর পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
ইমরান খান তার বইয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদের ছয় মাসের মধ্যে এবং তারপরের বছরগুলো আমার জীবনের সবচাইতে কঠিন সময় ছিল। জেমিমা পাকিস্তানে আমার সাথে থাকতে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমার রাজনৈতিক জীবন তার জন্য এটা কঠিন করে তুলছিল। ছেলেরা এখন ইংল্যান্ডে মায়ের সঙ্গে থাকে।
রেহাম খান:
এরপর ২০১৫ সালে একটি সাদাসিধে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো ইমরান বিয়ে করেন। এবার বিয়ে করেন সাংবাদিক রেহাম খানকে। ১০ মাসের মাথায় তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। তারপরই গোমর ফাঁস হয় ইমরানের। প্রাক্তন স্ত্রী রেহাম খান তার আত্মজীবনীতে লেখেন: ইমরান খান একজন ভণ্ড এবং মিথ্যাবাদী। তিনি রোজা রাখেন না এবং নামাজও পড়েন না।
এ ছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, ‘পাঁচজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে ইমরান খানের ঔরসজাত পাঁচ সন্তান রয়েছে।’ পরবর্তীতে ইমরান তার এই বিয়েকে ‘জীবনের সবচাইতে বড় ভুল’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
বুশরা বিবি:
সবশেষে ২০১৮ সালে তৃতীবারের মতো ইমরান খান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এবার বিয়ে করেন বুশরা বিবি নামের এক আধ্যাত্মিক নারীকে, যার কাছে তিনি প্রায় দুই বছর যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন রেহাম খান।
এর আগে, যুক্তরাজ্যের কেবলি কলেজে পড়ার সময় থেকেই ইমরান খানের ‘নারীসঙ্গ’ বিষয়টি জানাজানি হয়। সুদর্শন ইমরান খান লন্ডনের বিভিন্ন ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সে সূত্রে একের পর এক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
তার বান্ধবীদের নিয়ে ক্লাবে মাতলামি করা ও নাচের ছবি ইংলিশ মিডিয়াতে প্রকাশ পেলে মুখরোচক খবরের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন তিনি। ট্র্যাম্প নামের একটি নাইট ক্লাবে সুন্দরী নারীদের নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে এতটাই মেতে থাকতেন যেন ওটাই ছিল তার বাড়িঘর। এসব ক্লাবে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হতেন, নাচতেন, গাইতেন, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কয়দিন পর পর কেলেঙ্কারির জন্ম দিতেন।
সিটা হোয়াইটস:
১৯৮৬ সালে ধনী বাবার কন্যা সিটা হোয়াইটকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন ইমরান। তার সঙ্গে গভীর সম্পর্কের ফল ছিল এক কন্যা সন্তানের। সেই সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করেছিলেন ইমরান। পরে অবশ্য ১৯৯৭ সালে আদালতের এক আদেশে ইমরান খানকেই পিতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হয়।
মানশা:
২০১৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠ ও পাকিস্তানের শীর্ষ ধনী মিয়া মানশার ২১ বছর বয়সি কন্যার সঙ্গে ‘গোপন প্রেম’ চালিয়ে নারী কেলেঙ্কারি আরেক ধাপ এগিয়ে নেন। এক সময় ওই তরুণী সন্তান-সম্ভবা হয়ে পড়েছেন বলে খবর প্রচার পায়। ওই মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত লন্ডনে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার।
বেনজির ভুট্টো
ক্রিস্টোফার স্ট্যান্ডফোর্ডের লেখা ‘দ্য বায়োগ্রাফি-ইমরান খান’—এ ইমরান-বেনজির এর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুইজনের সম্পর্কে পারিবারিক সম্মতিও ছিল। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় সম্পর্ক ভেঙে দেন।
স্টিফেন:
ব্রিটিশ অভিনেত্রী স্টিফেনের সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক ছিল বলে ভারত ও পাকিস্তানে খবর বেরিয়েছিল। এ বিষয়ে ইমরান অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ফিজপ্যাটরিক ও ইমরানের খুব অল্প সময়ের সম্পর্ক ছিল বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।
বলিউডের একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে ইমরান খানের সম্পর্কের কথা জানা যায়। বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী রেখার সঙ্গে ইমরান খানের সম্পর্ক নিয়ে গল্পের শেষ নেই। ইমরান খানের একটি পুরনো সাক্ষাৎকার রেখার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু নিজেই শেয়ার করেছেন তিনি। এতে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছেন ইমরান খান।
বলিউড অভিনেত্রী রেখা
৭০ এবং ৮০ এর দশকে বলিউড শাসন করতেন রেখা। এ সময় ইমরান খানের সঙ্গে তার সম্পর্কের গুজব শোনা যায়।
রেখার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে ইমরান খানের বক্তব্যও পুরনো নিবন্ধে ছাপা হয়। এতে ইমরান বলেন, “আমি কিছু সময়ের জন্য অভিনেত্রীর সঙ্গ পছন্দ করেছি। আমি উপভোগ করেছি এবং এগিয়ে গেলাম। একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীকে বিয়ে করার কথা ভাবতেও পারি না।”
জিনাত আমান:
বলিউডের আরেক বিখ্যাত অভিনেত্রী জিনাত আমানও ইমরান খানকে ডেট করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে এসেছে।।
১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের টিম ভারতের সফরে এসেছিল, তখনই প্রথমবার ইমরান খানের নামের সঙ্গে প্লে বয় শব্দ জুড়ে যায়। সেই সময় কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ইমরান খান তাঁর ২৭ তম জন্মদিন জিনাত আমানের সঙ্গে একান্তে কোন এক জায়গায় পালন করেছিলেন। যদিও, দুজনই কখনও নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে খুলে কথা বলেন নি।
শাবানা আজমি
বলিউডের অভিনেত্রী শাবানা আজমির সাথে তৎকালীন পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খানের নাম জড়িয়েছিল। কিন্তু দুজনই কখনও নিজেদের সম্পর্কের কথা সবার সামনে স্বীকার করেননি। দুজনার গল্প আর ঘনিষ্ঠতা সেই সময় মাঝে মধ্যেই খবরে ছাপা পর্যন্ত হয়েছিল বলে জানান গিয়েছে।
মুনমুন সেন
বাদ যাননি সুচিত্রা কন্যা মুনমুনও। বাংলার অভিনেত্রী মুনমুন সেন আর ইমরান খানের সম্পর্ক নিয়েও এক সময় চরম কানাঘুষো চলেছিল।
শোনা যেত যে, ইমরান খান মুনমুন সেনকে খুবই পছন্দ করতেন। মুনমুন সেন শুধু বাংলাই না, কয়েকটি বলিউড সিনেমাতেও কাজ করেছিলেন। যদিও, দুজনার মধ্যে একজনও এই সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।