পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করেছে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এম কিউ এম)। গতকাল বুধবার ইমরান খান সরকারের প্রধান মিত্র হিসেবে পরিচিত এই দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ত্যাগ করে।
এম কিউ এম জোট ত্যাগ করায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতন শতভাগ নিশ্চিত; শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে-এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডন’র এক প্রতিবেদনে। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম দ্য ডন’র অনলাইনে ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
দ্য ডন’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এম কিউ এম আহ্বায়ক খালিদ মকবুল সিদ্দিকী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জোট থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আগে বিরোধী শিবিরে তারা যোগ দিচ্ছেন বলেও জানান এম কিউ এম আহবায়ক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে এম কিউ এমের প্রাধান্য থাকায় দলটি জোট ত্যাগের ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান দেশটির জাতীয় পরিষদে সরকার গঠনের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এম কিউ এম’র আহবায়ক বলেন, “আমরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে একত্রিত হয়েছি। আমি আশা করি এবার আমরা এমন একটি গণতন্ত্রের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারি যার প্রভাব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। এই প্রত্যাশা নিয়েই আমরা আপনাদের (বিরোধীদের) এই যাত্রায় যোগ দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন,“আমাদের কোনো ব্যক্তি বা দলীয় সুবিধা নেই। আমাদের চুক্তির প্রতিটি ধারা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের জন্য এবং বিশেষ করে সেই সব এলাকার জন্য যাদের আমরা গত ৩৫ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করে আসছি।”
এদিকে, ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এম কিউ এম’কে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের নেতা শেহবাজ শরীফ। পাঞ্জাব প্রদেশের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ (বুধবার) পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ আজ বিরোধী দলগুলো একত্র হতে পেরেছে এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই আরও বলেন, “আমি এম কিউ এম এবং দলটির নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা পাকিস্তানের ২২ কোটি মানুষের ইচ্ছা হৃদয়ে রেখে এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
পাকিস্তান পিপলস পার্টির(পিপিপি) চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের প্রতি কতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেহবাজ শরীফ আরও বলেন, “আমি আসিফ আলী জারদারি ও বিলাওয়ালের কাছে কৃতজ্ঞ যে-তারা আলোচনার এই পুরো প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে ইতিহাসকে একপাশে রেখে পাকিস্তানের সমৃদ্ধি এবং সুখের জন্য এই যাত্রা শুরু করেছে।”
পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও এম কিউ এম’কে ধন্যবাদ জানিয়ে দলটির সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দেন। বুধবার জোট থেকে এম কিউ এম আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে আসায় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় পিপিপি’র এই নেতা বলেন, “আমি বলতে চাই, পিপিপি ও এম কিউ এম সম্পর্ক অনাস্থা প্রস্তাবের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। যদি আমরা করাচি ও পাকিস্তানের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চাই তবে পিপিপি ও এম কিউ এমকে যেকোনো শর্তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
‘ইমরান খান জাতীয় পরিষদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন’ মন্তব্য করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর এই সন্তান আরও বলেন, “আগামীকাল(বৃহস্পতিবার) সংসদ অধিবেশন। আসুন আগামীকাল ভোট দিই এবং বিষয়টির নিষ্পত্তি করি। তার পর আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে যাত্রা শুরু করে তা শেষ করতে পারি।”
এদিকে, ইমরান খানের বিরোধী হিসেবে পরিচিত জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলের প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানও এম কিউ এমের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ‘সিদ্ধান্তটি শুধু করাচি কিংবা সিন্ধু নয় পুরো পাকিস্তানের জন্য জাতীয় ঐক্যের অভিব্যক্তি’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে (সরকারের মিত্ররা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায়) জাতীয় পরিষদে আমাদের পক্ষের আসনসংখ্যা এখন ১৭৬। অথচ আমাদের দরকার মাত্র ১৭২টি আসন।”