রাশিয়ার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড রাশিয়া জয়লাভ করেছে। পুতিন শিবিরের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখবে। নির্বাচনে প্রচুর জালিয়াতির অভিযোগ করেছে পুতিনবিরোধী শিবির।তবে রাশিয়ার নির্বাচন কমিশন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খবর রয়টার্সের
রাশিয়ার সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়,স্থানীয় সময় সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। ইউনাইটেড রাশিয়া প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টি পেয়েছে ২০ শতাংশের কম ভোট।
ভোটের সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, পুতিনপন্থি দলের বড় জয়ের লক্ষণ দেখা গেলেও গত নির্বাচনের তুলনায় তাদের এবারের অবস্থান বেশ খারাপ। ২০১৬ সালের ওই নির্বাচনে ৫৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে ইউনাইটেড রাশিয়া।
যে কারণে কম ভোট পেল পুতিনের দল
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, পুতিনের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি বা তাঁর কোনো সমর্থককে এই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
নাভালনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। নির্বাচনে ইউনাইটেড রাশিয়ার জয়ের পথ সুগম করতে নাভালনির ‘স্মার্ট ভোটিং’ অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা হয়। এসব কারণে আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার কম ভোট পুতিনের দলের বাক্সে পড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
জীবনযাত্রার মানে অবনতি ও ক্রেমলিনের সমালোচক আলেক্সেই নাভালনির তোলা দুর্নীতির অভিযোগে ভোটব্যাংকে টান পড়েছে পুতিনপন্থিদের। নাভালনি-মিত্রদের পরিকল্পিত নির্বাচনী প্রচারণাতেও ক্ষতি হয়েছে বেশ।
নির্বাচন `ভুয়া' বলে পুতিনবিরোধী শিবিরের অভিযোগ
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বিরোধী শিবির ও ক্রেমলিন সমালোচকদের দাবি, অবাধ নির্বাচন হলে ইউনাইটেড রাশিয়ার ফলাফল আরও বেশি খারাপ হতো।
পুতিনের দল জয় পাওয়ায় এ নির্বাচনকে প্রতারণামূলক নির্বাচন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধী দলের নেতারা। পুতিনের দলের এই জয়কে হতাশাজনক উল্লেখ করে বার্তা দিয়েছেন কারাবন্দী বিরোধী নেতা নাভালনি। নির্বাচনে পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া ছাড়াও প্রায় এক ডজন দল অংশ নেয়। তবে এই দলগুলো নামমাত্র বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত।
নির্বাচনে জয় পেলেও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও কোনো মন্তব্য করেননি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রুশ নেতা যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। ৬৮ বছর বয়সী পুতিন এখনও বহু রাশিয়ানের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণকারী রুশ প্রেসিডেন্ট দেশটির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় রয়েছেন। ২০০০ সালের ৭ মে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন পুতিন। ২০০৪ সালের ৭ মে দ্বিতীয় বারের মতো রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৭ মে তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ৭ মে চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন পুতিন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন রাশিয়ার এই নেতা।