ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ১২:০৬ এএম
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ১১ দিন পর তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৬০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যেই তুরস্কে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিন ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা।
৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই আবারও ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। এই দুই ভূমিকম্পের ফলে দুটি দেশে হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত ৪৬ হাজারেরও বেশি আর আহত লাখেরও বেশি। বাস্তুচ্যুত হয়ে খোলা আকাশের নিচে আছে লাখ লাখ মানুষ। সরকার ও বিশ্ববাসীর সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে চাপা পড়াদের উদ্ধার ও বাস্তুচ্যুতদের সাহায্যার্থে ব্যাপক একটি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বহু আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্পবিধ্বস্ত বিশাল অঞ্চলটি থেকে চলে গেছে। তবে এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত মানুষ পাওয়া যাচ্ছে।
ভূমিকম্পের ২৭৮ ঘণ্টা পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হতাইয়ে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হাকান ইয়াসিনোলু নামের চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে ইস্তাম্বুলের দমকল বাহিনী জানিয়েছে।
এর আগে তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর আন্তাকিয়ায় ওসমান হালেবিয়ে (১৪) ও মুস্তফা আভিজেয়িকে (৩৪) উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর মেরসিন শহরের এক হাসপাতালে স্ত্রী বিলগে, কন্যা আলমিলের সঙ্গে মিলন হয় তার; বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় তার।
আভিজেয়ির বাবা বলেন, ‘আমি আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এটা সত্যিই অলৌকিক ঘটনা। তারা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি ওই ধ্বংসাবশেষ দেখেছি। সেখানে থেকে কেউ বেঁচে ফিরতে পারবে না বলে ভেবেছিলাম আমি।’
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর অধিকাংশ উদ্ধারের ঘটনা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে। তারপরও হাইতিতে ২০১০ সালে ব্যাপক একটি ভূমিকম্পের ১৫ দিন পর এক কিশোরীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। তাই তুরস্কের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও মানুষ উদ্ধার হতে পারেন বলে আশা করা যায়।
এদিকে তুরস্ক ও সিরিয়ার নিহতদের জন্য বিশ্বব্যাপী গায়েবানা জানাজা পাঠ করা হয়েছে। বহু নিহতকে দাফন অনুষ্ঠান ছাড়াই কবর দিতে হয়েছে আর অনেকেই চিরতরে চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচে।
তুরস্কে মৃতের সংখ্যা এখন ৪০,৬৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে এটি আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধসে পড়ায় এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা একই আছে। ভূমিকম্পে দেশটির ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের অধিকাংশ ঘটনাই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ঘটেছে। এই বিদ্রোহীরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত আছে। এ সংঘাতের কারণে দেশটির ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোয় জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে সিরিয়ার পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতভর সেখানে সরকারি বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে প্রথমবারের মতো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আতারেব শহর সরকারি বাহিনীগুলো গোলাবর্ষণ করেছে।