পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিলে ফিনল্যান্ড বড় ‘ভুল করবে’ বলে দেশটিকে সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পুতিন। ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রায় চূড়ান্ত অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড। এই সময়ে পুতিনকে ফোনটি করেন সাউলি। ক্রেমলিন জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা নিয়ে এমন কোন সংকট মস্কো দেখছে না, যাতে ন্যাটোতে যোগ দিতে হবে ফিনল্যান্ডকে।
এরইমধ্যে ফিনল্যান্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এটি মস্কোর প্রথম ব্যবস্থা। যদিও ফিনল্যান্ডের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, রুশ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ফিনল্যান্ডে বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়বে না। দেশটির মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ আমদানী করা হয় রাশিয়া থেকে। ফিনিসরা বলছে, অন্য কোন উৎস থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করা যাবে।
এ বিষয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতি মেনে আসছিল ফিনল্যান্ড। সম্প্রতি এ নীতি পরিত্যাগ করে দেশটি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে চাইছে। ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তার ওপর কোন হুমকি নেই। এর পরও ন্যাটোয় যোগ দিলে দেশটি বড় ভুল করবে। ফিনল্যান্ডের সামরিক নীতির পরিবর্তন প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ক্রেমলিনের বিবৃতিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগেও ফিনল্যান্ডের সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে আগ্রহ ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন জানিয়েছিলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করতে চায় না তাঁর দেশ। তবে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরর পর দেশটির অধিকাংশ মানুষ ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। বদলে গেছে সানা মারিনের অবস্থানও। এখন তিনি ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলতে চান। একই কারণে ন্যাটো জোটের সদস্য হতে চায় সুইডেনও। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর আগে ফিনল্যান্ডের ৫৩ শতাংশ ও সুইডেনের ৪১ শতাংশ মানুষ ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে ছিল বলে জরিপে দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, সুইডেনে ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে জনমত ৫০ শতাংশের বেশি হয়েছে। আর ফিনল্যান্ডে এই হার এখন ৬৮। ন্যাটোতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ না দিলেও অনেক আগে থেকেই জোটটির সঙ্গে কাজ করছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সেনাবাহিনী। আফগানিস্তানের ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন দেশ দুটির সেনাসদস্যরা। দুই দেশই সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার (৮১০ মাইল) সীমান্ত রয়েছে।