সরকারবিরোধী লংমার্চ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদের আল্লাহ হো চকের কাছে ইমরান খানের কন্টেইনারে গুলি চালায় অজ্ঞাত হামলাকারীরা। এতে তার পায়ে তিনটি গুলি লেগেছে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরীর বরাতে ডনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হামলায় ইমরান খান ছাড়াও আরও দুইজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন সিনেটর ফয়সাল জাভেদ এবং আহমেদ চাত্তা। এ ঘটনায় এক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াজিরাবাদে দলীয় কর্মসূচীতে ইমরান খানকে বহনকারী কন্টেইনার ট্রাক লক্ষ্য করে একজন বন্দুকধারী গুলি চালান। তার দলের একজন মুখপাত্র আসাদ উমর জানিয়েছেন, ইমরান খানের পায়ে আঘাত লাগলেও তা গুরুতর নয়৷ আগাম নির্বাচনের দাবিতে দলীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গাড়িবহর নিয়ে তিনি রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে যাচ্ছিলেন৷ এই ঘটনায় তার তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির সমর্থকদের কেউ কেউ আহত হয়েছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷
বন্দুকধারীকে আটক করা হলেও তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি৷ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে ইমরান খানের দলের নেতা রাউফ হাসান দাবি করেন, ইমরান খানকে হত্যার উদ্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছিল৷
হামলার পর ইমরান খানকে কন্টেইনার ট্রাক থেকে অন্য গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার হয়৷ এসময় তার পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়৷
এদিকে, ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ।পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন শাহবাজ শরীফ।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) লংমার্চে এক পথসভায় নিজের দল তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) কর্মসূচিকে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের সাথে তুলনা করেন ইমরান খান।
দেশে আগাম নির্বাচনের দাবিতে ওইদিন রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চের পঞ্চম দিনে গুনজ্রাওয়ালাতে এক পথসভায় তিনি একথা বলেন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেলেও সরকার গঠনের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়টি শাহবাজ সরকারকে স্মরণ করে দিয়ে পথসভায় ইমরান খান আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরও একটি রাজনৈতিক দলকে (আওয়ামী লীগ) দেশ শাসনের সুযোগ না দেওয়ায় ১৯৭১ সালে দু’ভাগ হয়েছিল পাকিস্তান।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাম উল্লেখ না করে তার সমালোচনা করে পিটিআই প্রধান ওই পথসভায় আরও বলেন, ‘একজন চতুর রাজনীতিবিদ (জুলফিকার আলী ভুট্টো) ক্ষমতার লোভে সশস্ত্র বাহিনীকে তৎকালীন বৃহত্তম দল (আওয়ামী লীগের) বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিলেন, যারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। এর ফলে দেশটি ভেঙে গিয়েছিল।’
ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সাথে নিজের দলের আন্দোলনের তুলনা করে ইমরান খান বলেন, ‘সবাই জানে মুজিবুর রহমান ও তার দল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরিবর্তে একজন চতুর রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ এবং সেনাবাহিনীকে সংঘর্ষের পথে নিয়ে গিয়েছিল... বর্তমানে নওয়াজ শরিফ ও আসিফ জারদারি একই ভূমিকা পালন করছেন।তারা পিটিআইয়ের ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার যাত্রাকে বাধা দেওয়ার জন্য সংস্থার সাথে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে।’
এ সময় পিটিআই প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘নওয়াজ শরীফ আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি যখন দেশে ফিরবেন- আমি আপনাকে আপনার নির্বাচনী এলাকায় হারাবো।’