প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ৫, ২০২২, ০৯:৫৬ এএম

প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কা

অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, তেল ও বিদ্যুতের মূল্য অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগে এনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নেমেছে লাখো বিক্ষোভকারী।এসব বিক্ষোভকারীদের এখন একটাই দাবি-প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগ। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলবে বলে জানান রাস্তায় নেমে আসা বিক্ষুব্ধ জনগণ।

দ্রব্যমূল্যের  ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার ২৬ মন্ত্রীর সবাই পদত্যাগ করলেও এখনও ক্ষমতা ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসা এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনরও পদত্যাগ করেছেন। এমতাবস্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের আহ্বান জানান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।  তবে বিরোধী রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেয়নি।  এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন হাজারো বিক্ষোভকারী।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গোটা দেশজুড়ে উত্তাল বিক্ষোভে স্লোগান আর প্ল্যাকার্ডগুলো মূলত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিপক্ষে। তাকে উদ্দেশ্য করেই বিক্ষোভকারীদের ব্যানার ও প্লাকার্ডে “চলে যাও গোটা”, “চলে যাও গোটা” লেখা দেখা যাচ্ছে। মূলত দেশের অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকেই দায়ি করে বিক্ষোভকারীরা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। 

১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। এ বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ায় বাইরের দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার সরকার।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভরত এক নারী হাতে পোস্টার ধরে বলছিলেন সুখী জীবন থেকে কিভাবে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার জীবনে চলে এলেন। জানালেন, ১৭ ঘণ্টার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থা, প্রতিদিন রান্নার গ্যাসের জন্য হাহাকার আর গাড়ির পেট্রোলের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দেশটির সব সেক্টরেই ভয়াবহ অবস্থা। হাসপাতালগুলোতে ওষুধ নেই, স্কুলগুলোতে পরীক্ষার জন্য কাগজ নেই। কাগজের অভাবে বেশিরভাগ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সাধারণ জনগণ কিছু না পেলেও রাজনীতিবিদরা প্রতিদিন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। গ্যাস কিংবা কেরোসিনের জন্য তাদেরকে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, “২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রাজাপক্ষে অনেক বেশি কর কর্তন এবং আমদানি নিষিদ্ধের যে নীতি চালু করেছেন, তাতেই সংকট ঘনীভূত হয়েছে। তার ওপর তিনি আবার আইএমএফ থেকে সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারেও উদাসীন থেকেছেন। তবে দেশের বর্তমান সংকটের জন্য আগের প্রশাসনগুলোকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে। তবে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই বলছেন, তার অবিলম্বে পদত্যাগ করা এবং সংকটের পূর্ণ দায় মাথা পেতে নেওয়ার সময় হয়েছে।

Link copied!