অবৈধভাবে বসবাসরত প্রায় ১৭ লাখ আফগান শরণার্থীকে আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান।
হামলা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ মঙ্গলবার ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। তবে তালেবান সরকার পাকিস্তানকে তাদের ‘অগ্রহণযোগ্য’ পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানের শাসকরা বারবার পাকিস্তানে হামলাকারী জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী মাস্তুং শহরের একটি মসজিদে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবি উদযাপনের সময় বিস্ফোরণে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়।
এতে বলা হয়, চলতি বছর সীমান্তে হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাও বাড়তে থাকে। এসব হামলার জন্য আফগানিস্তান-ভিত্তিক সক্রিয় গোষ্ঠীকে দায়ী করে আসছে পাকিস্তান।
গতকাল মঙ্গলবার `অবৈধ` অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এই ক্র্যাকডাউনের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। একে `অগ্রহণযোগ্য` উল্লেখ করে পাকিস্তানকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকার।
তালেবান শাসকরাও পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বার বার অস্বীকার করে আসছে। গতকাল পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি `অবৈধ` আফগানদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের ঘোষণা দেন, যদিও এসময় বেলুচিস্তান প্রদেশে অপর এক হামলার কথা তিনি সরাসরি উল্লেখ করেননি।
শরণার্থীদের বিদেশে আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে অন্তর্ভুক্ত। কয়েক দশকের যুদ্ধের সময় পাকিস্তান কয়েক লাখ আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। বিশেষ করে ২০২১ সালে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সংখ্যা বেড়েছে।
জাতিসংঘের মতে প্রায় ১৩ লাখ আফগান শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত এবং আরও ৮ লাখ ৮০ হাজার থাকার জন্য আইনি মর্যাদা পেয়েছে।
তবে আরও ১৭ লাখ মানুষ অবৈধভাবে দেশে রয়েছে বলে মঙ্গলবার দাবি করেছেন বুগতি। তারা এখনও শরণার্থী মর্যাদা পায়নি বলেও স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিদের মাসের শেষ নাগাদ দেশ ছাড়তে হবে। সেটা স্বেচ্ছায় হোক বা জোরপূর্বক নির্বাসনের মাধ্যমে। যদি তারা না যায়,তাহলে প্রদেশ বা ফেডারেল সরকারের সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের নির্বাসনের জন্য ব্যবহার করা হবে।
এ ধরনের অভিযান কীভাবে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। এমনকি দেশে অবৈধ আফগানদের ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং সম্পদ শনাক্ত ও বাজেয়াপ্ত করার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
কাবুলে তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগান শরণার্থীরা পাকিস্তানের নিরাপত্তা সমস্যার সঙ্গে জড়িত নয়। যতদিন তারা স্বেচ্ছায় পাকিস্তান ত্যাগ করছে ততদিন সেই দেশের উচিত তাদের আশ্রয় দেওয়া।
পাকিস্তানে আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই আফগানদের ধরতে শুরু করেছে বিশেষ করে যাদের আইনি মর্যাদা আছে এবং থাকবে না। গত দুই সপ্তাহে এক হাজারের বেশি আফগানকে আটক করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে বেলুচিস্তান প্রদেশটি প্রায়ই তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালেবান এবং ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীসহ সশস্ত্র বিদ্রোহিদের হামলার শিকার হয়।