ইরানে হিজাব ইস্যুতে হামলার শিকার হয়ে কোমায় থাকা কিশোরীর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম গতকাল রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
৩ অক্টোবর তেহরানের শোহাদা মেট্রো স্টেশনে হিজাব ইস্যুতে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশের এক নারী সদস্য তাকে মারধর করেন।
নরওয়েভিত্তিক কুর্দিকেন্দ্রিক মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও জানায়, হামলার শিকার কিশোরীর নাম আরমিতা গারাওয়ান্দ। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে এই কিশোরী কোমায় চলে যায়। এর পর থেকে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
হেনগাওের দাবি, হিজাবসহ নারীদের পোশাক নিয়ে দেশটির কঠোর বিধি না মানার অভিযোগে আরমিতাকে মারধর করা হয়েছে। তবে ইরানের কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বোরনা সংবাদ সংস্থা জানায়, আরমিতার ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে বলেই ‘জোরালোভাবে প্রতীয়মান’ হচ্ছে।এর আগে ১১ অক্টোবর সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছিল, আরমিতার অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। অন্যদিকে সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, রক্তচাপ কম হওয়ার কারণে আরমিতা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।
এর আগেও কর্তৃপক্ষ প্রায় একই কথা বলেছিল। বলা হয়েছিল, মেয়েটির নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা ছিল। এ কারণে সে তেহরানের মেট্রো স্টেশনটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। এ ঘটনার সাথে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তবে হেনগাও জানায়, মেট্রো স্টেশনটিতে ইরানের কথিত নীতি পুলিশের এজেন্টরা আরমিতাকে আটক করেন। তার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় সে গুরুতর আহত হয়।
হেনগাও জানায়, মেয়েটি ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্দি–অধ্যুষিত শহর কেরমানশাহের অধিবাসী, তবে সে তেহরানে থাকে।
ইরানের বাধ্যতামূলক ইসলামি পোশাকবিধি অমান্য করার অভিযোগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে (২২) আটক করেছিল দেশটির নীতি পুলিশ।
পরে ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে দেশটি।
মাসার মৃত্যুর জেরে ইরানে বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়। এ ঘটনার এক বছরের মাথায় পোশাকবিধির কারণে হামলার শিকার হলেন আরমিতা।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, মাসার মৃত্যুর জেরে বিক্ষোভে ৭১টি শিশুসহ ৫ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন, আহত হন শত শত ব্যক্তি। কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে সাত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।