ধুমপান মানে বিষপান- কথাটির সাথে আপনি নিশ্চয়ই পরিচিত। তবে কথাটিকে সঠিকভাবে উপলব্দি করে, ধূমপান ছাড়তে দেখা যায় অল্প মানুষকেই। ধূমপানের ক্ষতি কেবল দেহেই পড়ে না, এর প্রভাব পড়ে সমাজ ও পরিবারেও।
মানব জীবনে ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেমন ধরুন, অনেকে জানে, ধূমপান করলে বিভিন্ন ক্যানসার হতে পারে, বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যানসার। অন্যান্য ক্যানসারও হতে পারে।
তবে আরো মারাত্মক যেটি, ধূমপান করলে আমাদের শরীরের যে রক্তনালি সেটি সরু হয়ে যায়। সরু হয়ে গেলে পরে বিভিন্ন জটিলতা হয়। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এত কিছু জানা সত্বেও মানুষ সিগারেট ছাড়তে পারে না।
সিগারেট তৈরির মূল উপাদান হচ্ছে তামাক। আর এই তামাকের গন্ধ অনেকেই সহ্য করতে পারে না। যার কারনে আপনার প্রিয় মানুষও আপনার থেকে দুরে সরে যায়। কিন্তু এখন সিগারেট হবে সবার প্রিয়।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের বাজারেই যাত্রা শুরু করেছে রুইবোস নামে একধরনের চা-পাতা দিয়ে তৈরি সিগারেট। ঐতিহাসিক সিগারেট উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) প্রথমবারের মতো প্রচলিত তামাক থেকে উৎপাদিত সিগারেটের পাশাপাশি রুইবোস চায়ের পাতা থেকে তৈরি সিগারেট বাজারে এনেছে। মানুষের সাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সিগারেট তৈরি হচ্ছে চা পাতা দিয়ে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের বাজারে তামাক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সুগন্ধীযুক্ত সিগারেট নিষিদ্ধ করায় এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে নিকোটিনযুক্ত সিগারেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় এই উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো। তবে বিশেষজ্ঞরা এই সিগারেটের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে এখনো অবগত নন।
উন্নত দেশগুলোতে এখন এমন ডিভাইস বা যন্ত্র পাওয়া যায়, যার সাহায্যে কোনো একটি সিগারেটকে সেটির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে উচ্চতাপে পুড়িয়ে ধূমপান করা হয়। এত দিন বিএটি সেসব ডিভাইসের উপযোগী করে তামাকের তৈরি স্টিক উৎপাদন করে আসছিল।
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসব ডিভাইসের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং কোনো কোনো তামাকের সিগারেটের ওপর উচ্চ কর আরোপ করায় ব্যবসা ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ছিল।
তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে নতুন পথ ধরেছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো। প্রতিষ্ঠানটি এবার ডিভাইসগুলোর জন্য এমন স্টিক তৈরি করছে, যা প্রচলিত তামাক দিয়ে নয় বরং রুইবোস নামে একধরনের চায়ের পাতা থেকে।
এই রুইবোসে কোনো ধরনের নিকোটিন নেই। এরই মধ্যে ইউরোপের জার্মানি, গ্রিসসহ নয়টি দেশের বাজারে সিগারেটটি নামানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা শিগগিরই বিশ্বব্যাপী এই সিগারেট বাজারজাত করতে চায়।
সিগারেটটির বিষয়ে বিএটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই উদ্যোগ প্রাপ্তবয়স্ক নিকোটিন সেবনকারী ও ধূমপায়ীদের জন্য ঝুঁকিমুক্ত পণ্য ভোগের ক্ষেত্রে একটি বড় সম্ভাবনা উন্মোচন করে দিল।’তবে গবেষকেরা বলছেন, চা ধোঁয়ার সাথে সেবন করলে এর প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন।
এ বিষয়ে লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষণা সহযোগী এরিকাস সিমোনাভিসিয়াস বলেন, ‘যা কিছুই পুড়িয়ে বা বাষ্পীভূত করে ফুসফুসে গ্রহণ করা হয়, সেগুলোর প্রতিটিই কোনো না কোনো প্রভাব ফেলবেই।’ গবেষকেরা এ কথা বললেও টোব্যাকো কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণাভিত্তিক প্রমাণ হাজির করেনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তামাকজাত পণ্যের জন্য নতুন নির্দেশিকা চালু করতে যাচ্ছে। নির্দেশনা অনুসারে, এখন থেকে হিটেড টোব্যাকো ডিভাইসে আর সুগন্ধীযুক্ত সিগারেট ব্যবহার করা যাবে না।