ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হন। এর পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় ১০৭ দিন ধরে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। মাত্র সাড়ে তিন মাসেই অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ২৫ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই নারী ও শিশু। এরই মধ্যে পুরো উপত্যকাকে এক নরকপুরীতে পরিণত করেছে তারা। এত মৃত্যু, এত রক্তক্ষয় ও ধ্বংসযজ্ঞ—তারপরও ক্ষান্ত হচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না ইসরায়েল।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় গড়ে প্রতিদিন ২৩৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৫৮৫ জন। রবিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের হামলায় এদিন নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১০৫। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হন। নতুন করে আরও ২৯৩ জনসহ হামলায় এ কয় মাসে আহত হয়েছেন অন্তত ৬২ হাজার ৬৮১ জন।
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ২০ লাখ উদ্বাস্তু হয়েছেন। খাবার ও পানির তীব্র সংকটে উপত্যকাটিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয়।
‘হৃদয়বিদারক’ ঘটনা
গাজায় প্রাণহানি ২৫ হাজার ছাড়ানো ‘হৃদয়বিদারক’ ঘটনা বলে বর্ণনা করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যে নজিরবিহীন ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, মহাসচিব থাকাকালে আমি এমনটা আগে কখনো দেখিনি।’
ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার নিন্দা জানিয়ে গুতেরেস বলেছেন, ‘এটা হৃদয়বিদারক ও একেবারে অগ্রহণযোগ্য। হামাস যেটা করেছে তার জন্য এভাবে সব ফিলিস্তিনিকে শায়েস্তা করে ওই হামলার বৈধতা দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়ে আমি হাল ছাড়ব না। গাজার মানুষ শুধু বোমা বা বুলেটে নয়; একই সঙ্গে খাবার, পানি, হাসপাতাল, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্য না পেয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে।’
আগ্রাসন বন্ধ করো: হামাস
এদিকে গতকালও গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়েছে হামাস। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস যোদ্ধারা কেন হামলা করেছিল, সে সম্পর্কেও কথা বলেছে গাজার এই শাসকগোষ্ঠী। এ নিয়ে গতকাল ১৬ পৃষ্ঠার এক নথি প্রকাশ করেছে তারা।
নথিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটি বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও পুরো গাজার বাসিন্দাদের ওপর ইসরায়েলের জাতিগত নিধনযজ্ঞের মতো অপরাধ ঠেকাতে তাদের ওই হামলা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
ইংরেজি ও আরবি ভাষায় প্রকাশ করা ওই নথির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে হামলা নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাল হামাস। এতে হামাস আরও বলেছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সব ধরনের ষড়যন্ত্র নিয়ে এটি ছিল একটি স্বাভাবিক ও দরকারি পদক্ষেপ।
পশুপাখির খাবারে জীবনধারণ
গাজার উত্তরে অবস্থান জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের। তীব্র খাদ্যসংকটে পড়েছেন সেখানে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা। আল-জাজিরার হাতে আসা একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, খাদ্যসংকটের কারণে সেখানকার বাসিন্দারা পশু ও পাখির খাবার কুড়িয়ে নিয়ে খাচ্ছেন।
শরণার্থীশিবিরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো খাবার নেই। চাল বা আটা কিছুই নেই। একটু খাবার পেলে তা নিয়ে সবার মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়।’ অপর একজন বলেন, দুবেলা খাবার পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। লোকজন পশু ও পাখির খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে।
গাজার বাসিন্দা ও তিন সন্তানের জনক আমের বলেন, ‘আমরা বোমার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য লড়াই করছি। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে এর চেয়ে বেশি ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে আমাদের। সন্তান ও পরিবারের জন্য খাবার পাওয়া যুদ্ধের চেয়ে বেশি কঠিন এখন।’