ডিসেম্বর ৩, ২০২৩, ১২:০৬ পিএম
ইসরায়েলি জিম্মি-ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময় এবং গাজাতে মানবিক সাহায্য সরবরাহের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী এবং হামাস জঙ্গিদের মধ্যে লড়াইয়ে সাত দিনের বিরতি দেয়া হয়। তারপর নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলে তীব্রভাবে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনা। এ দফায় তারা গাজাবাসীকে দক্ষিণ গাজা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
রবিবার দুপুরে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজায় আকাশ, সমুদ্র, স্থলে বোমাবর্ষণ চালিয়েই যাচ্ছে যে কারণে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা গাজার দক্ষিণে ছোট একটি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। দক্ষিণে খান ইউনিস এবং রাফাহকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি বোমা হামলা চলছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের যুদ্ধ বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলো টানেল শ্যাফ্ট, কমান্ড সেন্টার এবং অস্ত্র স্টোরেজ সুবিধাসহ হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। অন্যদিকে নৌবাহিনী উপকূলে হামাসের জাহাজগুলোকে আঘাত করেছে।
ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো মধ্য গাজার খান ইউনিস এবং দেইর আল-বালাহের মধ্যে রাস্তা কেটে ফেলে গাজা উপত্যকাকে তিনটি এলাকায় বিভক্ত করেছে। খান ইউনিসের পশ্চিমে এবং দক্ষিণে রাফাহ, মিশরের সীমান্তে আশ্রয়স্থলগুলোকে নির্দেশ করে একটি মানচিত্র তৈরি করে ফিলিস্তিনিদের দ্রুত খান ইউনিসের আশপাশের অর্ধ ডজন এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
এদিকে গাজার বাসিন্দারা জানান, তাদের যেসব জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছিল সেসব জায়গায়ই তারা হামলার শিকার হচ্ছেন। উত্তরে হামলার পর মানুষজন পালিয়ে আসায় দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত মানুষ আরও সরে যাওয়ার জন্য জায়গা খুবই সীমিত।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, বিমান হামলায় খান ইউনিসের কাছে আল-কারারা শহরে রাতারাতি বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, এতে শিশুসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে গাজা শহরের জেইতুনের পূর্বে এবং উত্তর গাজা উপত্যকার তেল আল-জাতারে টানা বোমা হামলা করা হয়েছে বলে জানায় হামাস।
খান ইউনিসের পূর্বে বানি সুহাইলায়, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন যে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুইজন নিহত এবং অন্যরা আহত হয়েছে। তেল আল-জাতারে বোমা হামলায় দুটি পরিবার আহত হয়। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
বিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং নিয়মিত বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় ইসরায়েলিদের এই সরিয়ে নেওয়ার আদেশ পালন করা কঠিন ছিল বলে জানান জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং বাসিন্দারা।
জাতিসংঘের মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকার জনসংখ্যার ৮০ ভাগ- প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। ৪ লাখ মানুষ রাফাহ শহরে আর ৩ লাখ মানুষ খান ইউনিস শহরে আশ্রয় নিয়েছে।
বর্তমান যুদ্ধ কয়েক দশকের বৃহত্তর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী পর্বে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলমান এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে ১২০০ ইসরায়েলি, বাকিরা ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলের দাবি তারা হামাসকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে কেন না এটি ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে।