মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরও ঘন ঘন ‘যুদ্ধাপরাধ’ঘটাচ্ছে: জাতিসংঘ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৯, ২০২৩, ১২:৪৯ এএম

মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরও ঘন ঘন ‘যুদ্ধাপরাধ’ঘটাচ্ছে: জাতিসংঘ

জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্বিচারে বেসমারিক ঘরবাড়ির ওপর হামলা চালাচ্ছে। ছবি: বিবিসি বাংলা

মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেদেশে আরও ঘন ঘন ও আরও নির্লজ্জভাবে সে দেশে যুদ্ধাপরাধ ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে  গণহত্যা এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণের মতো ঘটনা রয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা  জানিয়েছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছিল তারা শুধুমাত্র  সশস্ত্র বিরোধী দলগুলিকে লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে।তবে এক বার্ষিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ তদন্তকারীরা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০১৫ সালে আইআইএমএম নামের ওই স্বাদীন তদন্ত কমিটি তৈরি করেছিল।

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো গ্রাম পুড়িয়ে ফেলা, বেসামরিক বাড়িঘরের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে বোমা হামলা এবং বেসামরিক ও আটক যোদ্ধাদের গণহত্যা চালানো হচ্ছে।

জেনেভা থেকে বিবিসি সংবাদদাতা ইমোজেন ফুকস জানাচ্ছেন, দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করছে যে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যেতে যায় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই পটভূমিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ চলছে এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলার জন্য ফাইল তৈরি হচ্ছে বলেও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্বিচারে বেসমারিক ঘরবাড়ির ওপর হামলা চালাচ্ছে

দু’হাজার একুশ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক সেনা অভ্যুত্থানে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি মারাত্মক সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সেনা সরকার এমন সব রক্তাক্ত অভিযান চালিয়েছে যার জেরে দেশের বিভিন্ন অংশে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সশস্ত্র লড়াই শুরু হয়েছে।

আইআইএমএম-এর প্রধান তদন্তকারী নিকোলাস কোমিয়ানকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, “মিয়ানমারে প্রতিটি প্রাণহানির ঘটনাই দু:খজনক, কিন্তু বিমান হামলা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে পুরো সমাজকে ধ্বংস করার ঘটনা বিশেষভাবে মর্মান্তিক।”

তদন্তকারীদের কখনো মিয়ানমারে ঢুকতে দেয়া হয়নি

জাতিসংঘের দ্বারা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আইআইএমএম-এর তদন্তকারীরা কখনই মিয়ানমার সফরের জন্য সে দেশের সরকারের অনুমতি পাননি।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এরপরও তারা ৭০০টি সূত্রের বক্তব্য জোগাড় করেছেন এবং সাক্ষীর বিবৃতি, নথি, ছবি, ভিডিও, ফরেনসিক প্রমাণ এবং স্যাটেলাইট ছবি ইত্যাদি মিলিয়ে “দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি তথ্য-প্রমাণ” সংগ্রহ করেছেন। তারা বিশেষভাবে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব প্রমাণ করে এমন সব "সংযোগ" খুঁজছেন।

আইআইএমএম-এর প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ ঠেকানো এবং তাদের কমান্ডের অধীন দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সামরিক কমান্ডারদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।

"কিন্তু বারবার এধরনের অপরাধ উপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে [মিয়ানমারের] ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব অপরাধ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক,” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর" হাতে শিশু সৈন্যদের ব্যবহারের প্রমাণ রয়েছে এবং "অনেক কারাগারে বন্দী নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং অন্যান্য ধরণের গুরুতর দুর্ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।"

আইআইএমএম বলছে, মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের সময় ঘটা ব্যাপক যৌন সহিংসতার ব্যাপারেও তদন্ত চলছে। ২০১৭ সালে ওই ঘটনায় প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Link copied!