ইমরান খান গ্রেফতার, তিন বছরের কারাদণ্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগস্ট ৫, ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম

ইমরান খান গ্রেফতার, তিন বছরের কারাদণ্ড

সংগৃহীত ছবি

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে পাওয়া সম্পদ তিনি বিক্রি করেছেন এবং সেই তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ আনে নির্বাচন কমিশন। ওই মামলায় দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে এই দণ্ড দিয়েছেন আদালত।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হুমায়ুন দিলওয়ার এই রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি আদালত তাকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। অর্থা’ এই সময়ে ইমরান খান সক্রিয় রাজনীতি করতে পারবেন না।

রায় ঘোষণায় আদালত বলেন, ‘ইমরান খান ইচ্ছাকৃতভাবে ইসিপিতে তোশাখানা উপহারের বিবরণ গোপন করে অসত্য বিবরণ দিয়েছেন এবং মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। একারণে নির্বাচনী আইনের ১৭৪ ধারার অধীনে ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’ আইনের ১৭৪ ধারায় বলা আছে, দুর্নীতির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তিন বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ রুপী পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে।

এদিকে, আদালতের রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই লাহোরের বাসা থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করে পাঞ্জাব পুলিশ। এনিয়ে তিন মাসের মধ্যে ইমরান খানেকে দ্বিতীয়বার গ্রেফতার করা হলো।

পিটিআই পার্টির পাঞ্জাব প্রদেশ শাখা বিষয়টি এক টুইট বার্তায় গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। টুইট বার্তায় বলা হয়, গ্রেফতারের পর ইমরান খানকে কোট লাখপত কারাগারে নিয়ে গেছে।

গত বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সংসদ সদস্যদের অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়েন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। 

সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অক্টোবরে ইমরান খানকে দেশটির পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে পাওয়া সম্পদ তিনি বিক্রি করেছেন এবং সেই তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ আনে নির্বাচন কমিশন। এরপরই আসে এই সিদ্ধান্ত।

তাঁর বিক্রি করে দেয়া উপহারের মধ্যে কয়েকটি দামী হাতঘড়ি ছিল, যা কোন একটি রাজপরিবারের দেয়া এবং এগুলোর মূল্য ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের সমান। যার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি টাকা। ইমরানের বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির অভিযোগটি তোশাখানা বিতর্ক নামে পরিচিতি লাভ করে।

সাবেক তারকা ক্রিকেটার এবং পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ২০০৫ এবং ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ছিলেন ইমরান। 

ক্রিকেটার কাম রাজনীতিবিদ ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার উত্থান-পতনের। এক সময় বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন তিনি। দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। খেলার জগৎ ছেড়ে ব্রিটেনের অন্যতম ধনকুবের স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমা স্মিথকে বিয়ে করেন, পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল, রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ  বা পিটিআই প্রতিষ্ঠা করেন ইমরান খান। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন দলটির।

এক সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তানের মতো একটি অস্থিতিশীল দেশের। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে সেনাপ্রধান ও আদালত তাঁর বিপক্ষে চলে গেলে বিরোধী দলের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবার একজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। সেই প্রধানমন্ত্রীই ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গদিচ্যুত হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ইমরান। গদি হারালেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে এক সভায় গুলিতে আহতও হন তিনি। এতে সাধারণ জনগণ তাঁর পক্ষে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু করে।

এ ক্ষেত্রে ‘তোশাখানা বিতর্ক ইস্যুটি তাঁরা অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। এই বিতর্কের জেরে দলীয় প্রধান হিসেবে ইমরান খান থাকতে পারবেন না বলে ঘোষণা দেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন। পিটিআই প্রধান এর বিরুদ্ধে আপিল করলে নির্বাচন কমিশনের ওই রায় স্থগিত করে লাহোর হাইকোর্ট। এখন জেতে যেতে হচ্ছে ইমরান খানকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের অংশগ্রহণেরও অযোগ্য ঘোষণা করেছেন আদালত। ইমরান খানের কারাদণ্ড ও গ্রেফতার ইস্যুতে আবারও পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এমতাবস্থায় দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

Link copied!