হাইড্রোজেন উৎপাদনে স্পেনের পুয়ের্তোলইয়ানো

ডয়চে ভেলে

অক্টোবর ৬, ২০২৩, ০৩:০২ এএম

হাইড্রোজেন উৎপাদনে স্পেনের পুয়ের্তোলইয়ানো

ছবি:সংগৃহীত

শহরটির নাম পুয়ের্তোলইয়ানো। সেখানকার সার কারখানায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফ্যার্তিবেরিয়া নামের ওই সার কারখানার কর্মকর্তা ডেভিড হেরেরো বলেন, ‘অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য হাইড্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা যে সার বিক্রি করি, তা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া।’

বর্তমানে পুয়ের্তোলইয়ানোতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বছরে ৪০ হাজার টন হাইড্রোজেন উৎপাদিত হচ্ছে। এটি অবশ্য পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া নয়। হেরেরো জানান, প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে প্রতি টন অ্যামোনিয়া তৈরি করতে দুই মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়।

সবুজ হাইড্রোজেন সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে উৎপাদন করা হয়। কোনো জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। তবে এখন বছরে যে তিন হাজার টন উৎপাদিত হচ্ছে, তা চাহিদার এক-দশমাংশের কম।

ইবেরড্রোলা ইউটিলিটি কোম্পানির খাভিয়ের প্লাসা বলেন, ‘এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। এটি ইবেরড্রোলা ও ফ্যার্তিবেরিয়ার মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প। আমাদের পরিকল্পনা ২০ মেগাওয়াট থেকে ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা।’

স্পেন হাইড্রোজেনের হাবে (কেন্দ্রস্থলে) পরিণত হচ্ছে। জাতীয় হাইড্রোজেন কেন্দ্রে বিষয়টি চোখে পড়ে। এটি পুয়ের্তোলইয়ানোতে অবস্থিত।

কেন্দ্রের পরিচালক মিগেল আংখেল ফার্নান্দেজ সাঞ্চেজ বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থনের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও অর্থ সহায়তা আছে।

সে কারণে কাজ আরও দ্রুত এগোচ্ছে। এ ছাড়া স্পেনে অনেক নবায়নযোগ্য জ্বালানি আছে, যা এনার্জি ট্রানজিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরেকটি ভৌগোলিক সুবিধা।’

পরবর্তী দুই বছরে স্পেনে আরও বায়ু ও সৌরশক্তি অবকাঠামো নির্মিত হতে যাচ্ছে। এগুলো থেকে ৩৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, যা ২৫টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান। তবে এই পরিকল্পনা ও সবুজ হাইড্রোজেন তৈরির পরিকল্পনার সমালোচনাও হচ্ছে।

পরিবেশকর্মী খাবিয়ের আন্দালুস বলেন, ‘অবশ্যই সেসব কোম্পানির জন্য এটি ভালো হবে, যাদের আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু স্পেনের জন্য এটি বাবলের মতো, অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়। এবং এ কারণে অনেক জায়গায় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবাদ হচ্ছে।’

বেশি হাইড্রোজেন মানে বেশি পানির ব্যবহার। পুয়ের্তোলইয়ানোর কারখানায় এক কেজি সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে কমপক্ষে ৯ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। আর ওই জায়গা স্পেনের দক্ষিণে অবস্থিত, যেটি খরাপ্রবণ এলাকা।

আন্দালুস বলেন, ‘একটা চিন্তার বিষয় হচ্ছে আমাদের সবকিছুর জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকবে কি না, শুধু এখনকার জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও। পূর্বাভাস বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দশকগুলোতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পানি কম পাওয়া যাবে।’

জাতীয় হাইড্রোজেন কেন্দ্রের প্রকৌশলী ও গবেষকদের কাছে পানি কোনো সমস্যা নয়। মিগেল আংখেল ফার্নান্দেজ সাঞ্চেজ বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ইউরোপে হাইড্রোজেনের পুরো চাহিদা মেটাতে সক্ষম হব, যার পরিমাণ ১৫০ থেকে ১৮০ মিলিয়ন ঘনমিটার। প্রতিবছর শুধু স্পেনে সেচকাজে ব্যবহার হওয়া পুকুরগুলো থেকে এই পরিমাণ বাষ্প হয়ে যায়।’

ফ্যার্তিবেরিয়া সার কারখানা এরই মধ্যে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে। কর্মকর্তা ডেভিড হেরেরো বলেন, ‘সবুজ হাইড্রোজেনের কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, আমরা তা কাজে লাগাতে চাই এবং নতুন বাজারে ঢুকতে চাই।’

এর অর্থ হলো, সার প্রস্তুতকারক ফ্যার্তিবেরিয়া তার পণ্য তালিকায় ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি যোগ করতে চাইছে।

ক্রেতার কোনো অভাব হবে না। কারণ, স্পেনের রিফাইনারি ও ইস্পাত কারখানাগুলোতে বছরে কয়েক শ হাজার টন সবুজ হাইড্রোজেনের প্রয়োজন। এ ছাড়া আরও নতুন শিল্প যোগ হচ্ছে। 

পুয়ের্তোলইয়ানোতেই একটি হাইড্রোজেনচালিত ইস্পাত কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ শহর কয়লা ও খনিজ তেল থেকে হাইড্রোজেনে রূপান্তরের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।
 

Link copied!