ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
রাশিয়ার ভুয়া প্রচারকে মাত্রোস্কা বলা হয়। মাত্রোস্কা হলো এই ধরনের পুতুলের নাম। ছবি: সংগৃহীত
অন্য দেশের নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নয়। অভিয়োগ, এই কাজ তারা সাধারণ ভাবে করে থাকে ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে। কিছুদিন আগেই ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল। জার্মানির জাতীয় পার্লামেন্টে পেশ করা একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ জার্মানির নির্বাচনও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া।
চার বছরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এবারেও ব্যাপকভাবে ভুয়া তথ্য প্রচার করে ২৩ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। খবর ডিডাব্লিউ বাংলা।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা
এই প্রচারের মাধ্যমে মূলত মধ্যপন্থি দলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেন্টার ফর মনিটরিং, অ্যানালিসিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিসের (সিইএমএএস) লিয়া ফ্র্যুউইর্থ জানিয়েছেন, “সিংহভাগ ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে গ্রিন পার্টি, সিডিইউ, এসপিডি এবং তাদের প্রর্থীর বিরুদ্ধে।” সিইএমএএস ষড়যন্ত্র, ভুয়ো তথ্য, ইহুদিবিদ্বেষ এবং চরম দক্ষিণপন্থা নিয়ে কাজ করে।
লিয়া আরো জানান, এএফডি (অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি) নিয়ে খুব কম ভুয়া তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এএফডি-র যেটুকু উল্লেখ আছে তা মূলত সদর্থক।”
যেভাবে ছড়াচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেক নিউজ
দুটি সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা যাক। ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিক থেকে সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের একটা পুরনো ভিডিও একাধিক এক্স হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট হতে থাকে। ভিডিওটিতে তার ভঙ্গুর মানসিক চিত্র ধরা পড়ে। এমনটাও দেখা যাচ্ছে যে ২০১৭-তে সিডিইউ নেতার আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা ছিল।
এই সংক্রান্ত একটা পোস্ট ১০ দিনে প্রায় ৫৫ লাখ ভিউ পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সামাজিক মাধ্যমে যারা এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন তারা একই সঙ্গে একথা লিখেছেন যে ম্যার্ৎস ইউক্রেনকে টরাস মিসাইল যোগান দেওয়ার কথা বলেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের নিরিখে এই বিষয়টি খুবই উল্লেখযোগ্য।
আরেকটি ক্ষেত্রে, গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেক এবং ক্লডিয়া রথ ভুয়া খবরের শিকার হন। ন্যারেটিভ নামের একটি ওয়েবসাইটে একটি খবর এবং একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে এই দুই নেতা ১০ কোটি ইউরোর একটি তছরূপ করেছেন। প্রুশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একাধিক ছবি ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে এবং সেখান থেকে একাধিক ব্যক্তিকে সেই ছবি বিক্রি করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন ডিডব্লুকে জানায় যে এই দাবি ভিত্তিহীন।
মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য সচেতনতা বৃদ্ধি
ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থা নিউজগার্ডের লিওনি ফালার জানিয়েছেন, “রাশিয়ার লক্ষ্য অনিশ্চয়তা প্রসার এবং ভোটারদের মেরুকরণ করা।” তিনি নিশ্চিত ভাবে জানান যে এই অপপ্রচারের মধ্যেও চরম দক্ষিণপন্থি পার্টি এএফডির প্রার্থী অ্যালিস ভাইডেল সম্পর্কে সদর্থক প্রচার চালাচ্ছে এরা।
সাধারণভাবে, অন্য দেশের সরকার যদি জার্মানিতে ভুয়া খবর ছড়ায় তা আইনত দণ্ডনীয় নয়। জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারেক্টিভ গবেষণা কেন্দ্রকে একথা জানায়। তবে একথাও জানানো হয়েছে যে একটি আন্তর্বিভাগীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ চালু করা হয়েছে যারা ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে ছড়ানো বিপদগুলির দিকে নজর রাখছে।
মন্ত্রণালয় একটি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুয়ো তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।