ইসরায়েল যে সামরিক শক্তি দিয়ে গাজাকে বিধ্বস্ত করে চলেছে

আল জাজিরা

অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ০১:৫৫ এএম

ইসরায়েল যে সামরিক শক্তি দিয়ে গাজাকে বিধ্বস্ত করে চলেছে

ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত গাজা। ছবি: রয়টার্স।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় আবারও দেশটির সামরিক শক্তি আলোচনায় এসেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে দৃশ্যত গাজা উপত্যকা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। একপেশে এই লড়াইয়ে আজ বুধবার পর্যন্ত গাজায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যে সবচেয়ে শক্তিশালী, এ বিষয়ে বিশ্লেষকদের দ্বিমত নেই। এমনকি ইসরায়েলি বাহিনী অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকারী বাহিনীগুলোরও অন্যতম।

সামরিক বাহিনী
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ‘মিলিটারি ব্যালেন্স, ২০২৩’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশাল এক সামরিক বাহিনী পরিচালনা করে আসছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ নিয়মিত সেনা। রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। সম্ভাব্য স্থল অভিযানে অংশ নিতে বর্তমানে গাজা সীমান্তে তিন লাখের মতো ইসরায়েলি সেনা অবস্থান নিয়েছে বলে সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

বয়স ১৮ বছর হলেই ইসরায়েলের সব নাগরিক বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আসেন। একবার তালিকাভুক্ত হলে পুরুষদের ৩২ মাস আর নারীদের ২৪ মাসের মতো সামরিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়।

সমরাস্ত্র
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ইসরায়েলের। তাদের রয়েছে অত্যাধুনিক নজরদারি সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র। দেশটির রয়েছে সমরাস্ত্রের বিশাল মজুতও। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রয়েছে ২ হাজার ২০০টির বেশি ট্যাংক। ৫৩০টির মতো বিভিন্ন প্রযুক্তির কামান।

বিমানবাহিনীর রয়েছে ৩৩৯টি যুদ্ধবিমান। এসব যুদ্ধবিমানের ৩০৯টি স্থল হামলায় ব্যবহার করা যায়। যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৬টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, ৮৩টি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান, ৩০টি সর্বাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া ১৪২টি হেলিকপ্টারের মধ্যে রয়েছে ৪৩টি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার।

ইসরায়েলি নৌবাহিনীর রয়েছে পাঁচটি সাবমেরিন। এ ছাড়া আরও ৪৯টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে এই বাহিনীর।

আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
স্বল্পপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে ইসরায়েলে আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়। আইআইএসএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে হামাসসহ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ছোড়া ৯০ ভাগ রকেটই ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে আয়রন ডোম।

এ ছাড়া মধ্য ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করারও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে ইসরায়েলের। দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে আরও রয়েছে স্পাইডার ও ডেভিড স্লিং।

আইআইএসএসের মতে, ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলেও মনে করা হয়। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি জেরিকো ক্ষেপণাস্ত্র আছে দেশটির।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা পেয়ে থাকে ইসরায়েল। দেশটি ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সাল নাগাদ ২৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পেয়েছে।

যুদ্ধে দিনে খরচ ১০০ কোটি শেকেল
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মত্রিচ বলেছেন, যুদ্ধে দেশটির প্রতিদিন সরাসরি খরচ হচ্ছে ১০০ কোটি শেকেল বা ২৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

অবশ্য এ হিসাবের মধ্যে সামরিক বাহিনীর বিপুলসংখ্যক রিজার্ভ সদস্য মোতায়েনের ব্যয় এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর ছোড়া রকেটের কারণে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির ক্ষতির বিষয়টি আসেনি বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়।

আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ইসরায়েলের আউটলুক ‘স্থিতিশীল’ থেকে কমিয়ে ‘নেতিবাচক’ করেছে। বিষয়টিকে ‘সতর্কবার্তা’ বলছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এই সংকট সত্ত্বেও ইসরায়েল বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়বে কি না, তা এখনই বলতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

Link copied!