আগস্ট ১২, ২০২৩, ০২:২৫ পিএম
হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান স্বপ্নদীপ কুন্ডু। ছাত্রাবাসের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁর নগ্ন দেহ। ঘটনাটি ৯ আগস্ট বুধবার রাত ১১:৪৫ এর।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কোলকাতার কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর ৪:৩০ মিনিটে মৃত্যু হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। মৃত্যুর মাত্র দুই দিন আগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ১৮ বছর বয়সী স্বপ্নদীপ তাঁর হোস্টেলের সিনিয়রদের দ্বারা র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। তাঁকে নগ্ন করে প্রধান হোস্টেল কমপ্লেক্সের বারান্দায় দৌঁড়াতে বলা হয়েছিল, এমনটাই অভিযোগ করেন কয়েকজন সহপাঠী। প্রো-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো র্যাগিংয়ের অভিযোগ পাইনি, তবে কমিটি খতিয়ে দেখবে।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বৃহস্পতিবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন তিনি ছাত্রদের থেকে এমন কিছু সংবেদনশীল তথ্য পেয়েছেন, যা তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলতে চাননি।
যাদবপুরের মেইন হোস্টেলের এ-২ ব্লক যার তৃতীয় তলায় থাকতেন স্বপ্নদীপ। সে তাঁর সহপাঠীদের জানিয়েছিল হোস্টেলে প্রথম রাতে হওয়া ভয়ঙ্কর র্যাগিংয়ের কথা। তাকে নগ্ন করে র্যাগিং করা হয়েছিল। শুধু মাত্র অন্তর্বাস পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের বিবরণ দিতে হয়েছিল এবং আপত্তিকর কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল তার ইচ্ছার অমতে।
স্বপ্নদীপের বন্ধুরা আরও অভিযোগ করে বলে, যেহেতু তাঁর (স্বপ্নদীপ) গায়ের রং অনেক উজ্জ্বল ও ছেলেটি লাজুক প্রকৃতির ছিল, তাই সেই র্যাগ দেওয়া সিনিয়ররা তাঁর সমকামী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং তাঁকে প্রমাণ দিতে বলে।
বুধবার সন্ধ্যায় স্বপ্নদীপ তাঁর মাকে মুঠোফোনে মৃত্যুর আশঙ্কার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছিলেন এবং তাঁকে হোস্টেল থেকে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। পরক্ষণ থেকেই তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি বলে জানান তাঁর মা।
স্বপ্নদীপ কুন্ডুর সহপাঠীদের একজন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি দাবি করছেন স্বপ্নদীপকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর সমকামিতার ব্যাপারে জানাজানি হওয়ার লজ্জায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে তাঁকে র্যাগ দেওয়া সিনিয়ররা চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিজেদের র্যাগিং মুক্ত ভাবধারা বজায় রাখতে উদাসীনতা দেখাচ্ছে। নামসর্বস্ব তদন্তের কথা বলছে। কিন্তু, এটা আত্মহত্যা নয়, বরং হত্যা, দাবি করেন স্বপ্নদীপের সহপাঠী যিনি বাংলা বিভাগেই ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে দিয়েই তদন্ত শুরু করছে বিশ্ববিদ্যালয়। মৃতের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানায় কোলকাতা পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্ৰেফতার হয়েছেন সৌরভ চৌধুরী। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। শনিবার অর্থাৎ আজকে সৌরভকে আদালতে তোলার কথা জানা গেছে।