ইরানের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২০, ২০২৫, ১১:২১ এএম

ইরানের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ছবি: সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সাত দিন গড়িয়ে আজ অষ্টম দিনে পড়লো। শেষ পর্যন্ত এই সংঘাত কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই ইস্যুতেই আজ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জেনেভা সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাসেরও এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে গত এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর এটিই হবে ইরান ও পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, এই আলোচনার লক্ষ্য “ইরানকে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে স্থায়ীভাবে পিছিয়ে আনা।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ল্যামি বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি থামানোর সময় এখনই এবং কারও জন্যই সুফল বয়ে না আনা ওই অঞ্চল জুড়ে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রতিরোধ করারও উপযুক্ত সময় এটি।”

ইরানের ‘পারমাণবিক কর্মসূচি’ বিষয়ক সিদ্ধান্তে একমত যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র সঙ্গে ডেভিড ল্যামির এক বৈঠকে দুই জনই একমত হন যে “ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারবে না।”

ওই বৈঠক ল্যামি ধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, তারা “দীর্ঘমেয়াদে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুর সমাধান” নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এর একটি কূটনৈতিক সমাধান হতে পারে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। হোয়াইট হাউজের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই বার্তা জানান তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। 

ট্রাম্প বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সাথে আলোচনা হতে পারে বা নাও হতে পারে তার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব যে আমি যাব কিনা।”

এর আগে বিবিসিসহ মার্কিন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এই খবর অস্বীকার করেন।

ট্রাম্প কী করবেন, তা জনসমক্ষে স্পষ্ট করে বলেননি। তবে বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি এটা করতে পারি, আবার নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই। তবে এতটুকু বলতে পারি, ইরান বড় সমস্যায় আছে এবং আলোচনায় ফিরতে চায়।”

ইরান-ইসরায়েল থেকে সরে যাচ্ছেন বিদেশিরা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে চেক রিপাবলিক, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ তেহরানে তাদের দূতাবাস কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

তবে যেহেতু ইরানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও যাত্রী পরিবহন করছে না, তাই বিশ্বের অনেক দেশ ওই দুই দেশ থেকে তাদের নাগরিকদেরকে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে জটিলতার মধ্য দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে।

  • অস্ট্রেলিয়া দেশটি ইরান থেকে প্রায় দেড় হাজার ও ইসরায়েল থেকে এক হাজার ২০০ জনকে সরিয়ে নিচ্ছে। কিছু অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ইতোমধ্যে জাহাজে করে সাইপ্রাসে পৌঁছেছেন। অন্যদের স্থলপথে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

  • চীন দেশটি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি এবং ইসরায়েল থেকে আরও কয়েকশো নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া চীন তার নাগরিকদের আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক, আর্মেনিয়া অথবা ইরাক হয়ে স্থলপথে দেশ ত্যাগ করতে বলেছে। 

  • ভারত ইরান থেকে স্থলপথে পালিয়ে আসা প্রায় ১১০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী আর্মেনিয়া হয়ে দিল্লি পৌঁছেছেন। এছাড়া ইসরায়েলে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকরা যদি চান, তাহলে তাদেরকেও সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। বর্তমানে ইসরায়েলে প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় নাগরিক রয়েছে। 

  • জাপান ইরান ও ইসরায়েল থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জিবুতিতে দুইটি সামরিক বিমান পাঠাচ্ছে দেশটি। ইসরায়েলে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং ইরানে ২৮০ জন। 

  • পাকিস্তান সংঘর্ষ শুরুর পর ইরান থেকে প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি নাগরিক চলে গেছেন। পাকিস্তানের সাথে ইরানের যে ৯০০ কিলোমিটার বা ৫৬০ মাইলেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রেখা আছে, তার সব ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। তবে শুধু পাকিস্তানি নাগরিকরা এই পয়েন্টগুলো দিয়ে দেশে ফিরতে পারবে।

Link copied!