ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময় কি তবে ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২২, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময় কি তবে ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল

ছবি: সংগৃহীত

ইরানকে গত বৃহস্পতিবার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা এড়াতে তেহরান যেন আলোচনায় বসে। কিন্তু সেই সময়সীমা দুই সপ্তাহ নয়, হয়ে গেল মাত্র দুই দিন।

গতকাল শনিবার রাতে হঠাৎই ঘোষণা এল, ইরানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প একে বললেন, ‘খুবই সফল’ অভিযান।

তাহলে কি এ ‘দুই সপ্তাহ’ শুধু ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল, ইরানকে কি ছুটির দিনে (দুই সপ্তাহ সময়) আশ্বস্ত রাখতে (মার্কিন হামলা থেকে) এ কৌশল নেওয়া হয়েছিল, নাকি ট্রাম্পের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে পর্দার আড়ালে চলা আলোচনাগুলো ভেস্তে গেছেইরানে মার্কিন হামলায় উঠে আসছে এমন নানা প্রশ্ন।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তাৎক্ষণিক ফলাফল নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে হামলার খবর জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এটাই শান্তির সময়।’

যাহোক, ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে নিছক আশাবাদী এক মন্তব্য বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ ইরান আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে তাদের সার্বভৌম ভূখণ্ডে হামলা চালায়, তবে তার জবাব দেবে তারা।

ইতিমধ্যে ইসরায়েল ইরানের সামরিক সক্ষমতা খর্ব করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবু দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির হাতে এখনো অস্ত্রশস্ত্র আছে। পরিস্থিতিও দ্রুত জটিল হতে পারে।

এখন অপেক্ষার ‘খেলা’ শুরু হলোনিজেদের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার জবাবে ইরান কী করে? বিশেষ করে ফর্দোর মতো স্থাপনায়ও যেখানে হামলা হয়েছে। ফর্দো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘শিরোমণি’ হিসেবে বিবেচিত।

ট্রাম্পের আশা, এ হামলার মাধ্যমে ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইসরায়েলের হামলার মধ্যেও যারা আলোচনায় আসেনি, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বোমার নিচে এসে আর বেশি আগ্রহী হওয়ার কথা নয়।

ট্রাম্প বোঝাতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা একটি এককালীন, সফল অভিযান। তবে আদৌ তারা ইরানের শক্তভাবে সুরক্ষিত সেই গবেষণাকেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে পেরেছে কি না, তা জানতে সময় লাগবে। যদি না পেরে থাকে, তবে আবার হামলার চাপ বাড়বে। নইলে এ হামলা ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি হয়েই থাকবে, যার বিনিময়ে সামরিক লাভ খুব সামান্যই।

এ ঝুঁকি শুধু আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে নয়, বরং ঘরোয়া রাজনীতির হিসাবেও গুরুতর। ইরানে হামলার সম্ভাবনা নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি ট্রাম্পের নিজের ‘আমেরিকা ফার্স্ট প্রচারশিবিরের ভেতর থেকেও সমালোচনা উঠেছে।

এ হামলা যদি একবারের ঘটনা হয়, তবে ট্রাম্প হয়তো তার শিবিরের বিভক্তি ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু এটি যদি বড় সংঘাতে রূপ নেয়, তবে যিনি নিজেকে ‘শান্তির দূত’ বলে দাবি করেন, তাকেই এবার দলের ভেতর বিদ্রোহের মুখে পড়তে হতে পারে। 

ট্রাম্পের জন্য গতকালের হামলা ছিল একটি আগ্রাসী সিদ্ধান্ত। আর তা এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে, যিনি প্রথম মেয়াদে কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু করেননি ও নির্বাচনী প্রচারে বারবার যুক্তরাষ্ট্রের আগের নেতাদের বৈদেশিক সংঘাতে জড়ানোর নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

এখন ট্রাম্প চালটি চাললেন। কিন্তু এরপর কী হবে, তা আর পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে নেই।

উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বৃহস্পতিবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের বার্তা পড়ে শোনান। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘ইরানইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে (সংঘাতে) যাব কি না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব”।’

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।

এর আগে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্পের অনুমোদন দেওয়ার খবর দেয় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে সিবিএস জানায়, ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা ভাবছেন ট্রাম্প। তবে ইরান নিজেদের পারমাণবিক প্রকল্পগুলো বন্ধে রাজি হবেএমন আশায় এখনো হামলা শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।

বুধবার ইরানইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর বিষয়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন সংবাদিকেরা। স্পষ্ট জবাবের দিকে না গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটি করতে পারি, নাও পারি।’ তবে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, তা পেন্টাগন বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত আছে বলে মার্কিন সিনেট কমিটিকে জানিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদনের খবরের দিকে ইঙ্গিত করে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। লেখেন, ইরান নিয়ে তার ভাবনা সম্পর্কে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কোনো ধারণা নেই।

চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চান, তা আগে থেকেই বলে আসছেন বিশ্লেষকেরা। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিমানবাহী একটি মার্কিন রণতরিসহ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ আরব সাগরে অবস্থান করছিল। আরেকটি রণতরি মধ্যপ্রাচ্যের পথে ছিল।

Link copied!