অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর জোট ন্যাটো। ইউরোপে আরেকটি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতেই এই প্রস্তাব দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, সেখানে মস্কো কোনো ধরনের ভেটো দিতে পারবে না বলেও তারা জানিয়েছে। ব্রাসেলসে রুশ পক্ষের সঙ্গে জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর আজ বুধবার এ কথা জানিয়েছে ন্যাটো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাটো মহাসচিব জেমস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো একগুচ্ছ দাবির মধ্যে কয়েকটিকে মাত্র আমলে নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েনের প্রেক্ষাপটে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়ার দিক থেকে নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়। একটা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে বসা এই আলোচনায় ন্যাটোর অবস্থান নিয়ে এখন পর্যন্ত অবশ্য রাশিয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
স্টলটেনবার্গ জানান, জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধি ও রাশিয়ার প্রতিনিধির মধ্যে টানা চার ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। এতে অন্য কোনো দেশের নিরাপত্তা নিয়ে নাক গলাতে বা অন্য কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করতে মস্কোকে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ন্যাটো।
এ সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘ইউরোপে নতুন একটি সশস্ত্র যুদ্ধের বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বেশ কিছু বিষয়ে উল্লেখযোগ্য মতবিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের নিষ্পত্তি সহজ নয়। কিন্তু ন্যাটোভুক্ত সব দেশ ও রাশিয়া এক টেবিলে বসে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাটা নিঃসন্দেহে ভালো ইঙ্গিত।’
এদিকে, যে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে এই ‘যুদ্ধ’ ঝুঁকি, তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে মস্কো। তারা বলছে, তারা তাদের নিরাপত্তা বিষয়ে নিশ্চয়তা চায়। একই সঙ্গে তারা চায় না যে, ন্যাটো আরও বিস্তৃতি হোক। শুধু তাই নয়, তারা চায়—স্নায়ুযুদ্ধের পর মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের যে দেশগুলো এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তারাও যেন জোট থেকে বেরিয়ে আসে।
গত সোমবার জেনেভায় মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল রাশিয়া। সেই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শারম্যান। তিনি বলেছেন, ব্রাসেলসে ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার কাছ থেকে তিনি নতুন কিছু শোনেননি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পরমাণু শক্তিধর রাশিয়া কেন তার চেয়ে শক্তিমত্তায় অতি ক্ষুদ্র এক প্রতিবেশী দেশের দিক থেকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বোধ করছে, এবং সে জন্য সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী মহড়া চালাচ্ছে, তা তাঁর কাছে ঠিক স্পষ্ট নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন—‘এর অর্থ কী? এটা কি আক্রমণ? এটা কি হেয় করার জন্য? আমি ঠিক জানি না। কিন্তু কূটনৈতিক সমাধান পেতে এই পন্থা ঠিক কার্যকর নয়। রাশিয়া উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আবার সেটা করবে না—এমন কথাও তারা বলেনি।’
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিতেও ভোলেননি স্টলটেনবার্গ। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ওপর যেকোনো ধরনের বলপ্রয়োগের সিদ্ধান্ত রাশিয়ার জন্য হবে বড় ধরনের ভুল, যার মাশুল তার গুনতে হবে। শুধু ইউক্রেন ও ন্যাটোই সিদ্ধান্ত নেবে যে, ইউক্রেন ন্যাটো জোটে আসতে পারবে কি পারবে না।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে রাশিয়াকে চাপ প্রয়োগের রাস্তাটি এরই মধ্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের ওপর যেকোনো ধরনের আক্রমণ করা হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ দেশটির শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি বিল বুধবার মার্কিন সিনেটে উত্থাপন করেছে ডেমোক্র্যাটরা।
সার্বিক বিষয়ে রাশিয়ার বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। বুধবার রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গ্রুশকো এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা।