আদালতের তলবি পেয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। প্রায় সাত বছর আগে পাকিস্তানের আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ হামলার ঘটনার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ে জানতে চেয়ে আদালত সরকার প্রধানকে ওই তলবি পাঠায়।
পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ওই হামলা চালিয়েছিল। সম্প্রতি ইমরান খানের সরকার ওই দলের সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি করেছে যা ৯ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। ওই ঘটনার পরই দেশটির সর্বোচ্চ আদালত ইমরান খানকে তলব করে।
স্থানীয় সময় বুধবার (১০ নভেম্বর) সকালে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হন ইমরান। পাক প্রধানমন্ত্রীর আদালতে উপস্থিত হওয়ায় দেশটির জনগণের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকের ধারণা-তবে কি ইমরান খানের সময় শেষ হতে চলেছে?
বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ ও তথ্যমন্ত্রী ফোয়াদ চৌধুরীকে নিয়ে আদালতে হাজির হন ইমরান খান। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে এপিএস মামলার বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে বলেন। পরে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জানাতে আদেশ দিয়ে চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন আদালত।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ডন জানায়, শুনানিকালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে সুপ্রিম কোর্ট কি জানতে চান বা কি নির্দেশনা দেন— তা জানতে উদগ্রীব ছিল পাকিস্তানের জনগণ। এই সুপ্রিম কোর্টই দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। ফলে ইসলামাবাদে কী ঘটতে যাচ্ছে সেদিকেই সবার কৌতুহল ছিল বলে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পেশোয়ারের ওই আর্মি পাবলিক স্কুলে টিটিপি’র হামলায় ১৩২ শিশুসহ ১৪৯ জন নিহত হন। ওই ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এসব বিষয় আদালতকে অবহিত করতে সুপ্রিম কোর্ট এটর্নি জেনারেল খালিদকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই সময় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের একক বেঞ্চ জানতে চান, নির্দেশনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানেন কিনা? এটর্নি জেনারেল জবাবে বলেছিলেন, এখনো জানানো হয়নি, তবে জানাবেন। এতে প্রধান বিচারপতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে আনুন, আমরাই কথা বলব তার সঙ্গে। সে সময় সরকারের পক্ষে সকল ভুলের দায় নিজ কাধে তুলে নেন এটর্নি জেনারেল।
আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসা সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন তালেবানের থেকে পৃথক সংগঠন তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। ২০০৭ সালে এই সংগঠনটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উপজাতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি তালেবান নামে গড়ে ওঠে। আফগান তালেবানের পাকিস্তানি সমর্থকদের দলচ্যুত কয়েক ব্যক্তি মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলে।
পাকিস্তানের আর্মি পাবলিক স্কুলের ওই হামলায় টিটিপি জড়িত বলে দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত ১৪ বছর ধরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর হামলায় কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তানের গত জাতীয় নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করতে না পারলেও ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে সমর্থন দেয়। তখন থেকেই ইমরান খানের সঙ্গে দলটির নেতাদের একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়।
ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই টিটিপি’র সাথে আলোচনায় বসেন। দেশে পুরোপুরি শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ওই গোষ্ঠীটির সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি হয়েছে। গতকাল (৯ নভেম্বর) থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। শেষ হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর। তবে সরকার ও টিটিপি চাইলে অস্ত্র বিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যাবে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়। দেশটিতে পুরোপুরি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিষয়টিকে।
দেশটিতে এর আগেও পাক সরকার ও টিটিপি একাধিকবার শান্তি আলোচনায় বসলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ টিটিপি’র অন্যতম প্রধান সহাতাকারী দল হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্টীকে মনে করা হয়। তালেবান গোষ্ঠী এবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকারের অঘোষিত সহায়তায় আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় বসেছে। তাই তালেবানের কারণেই টিটিপি আর পাকিস্তানে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইবেনা। গত আগস্টে কাবুল তালেবানের দখলে যাওয়ার পর তাদের সহায়তায় টিটিপির সঙ্গে শক্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে ইসলামাবাদ।