আফগানিস্তানে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল: বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগস্ট ১৭, ২০২১, ০৪:৪৬ পিএম

আফগানিস্তানে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল: বাইডেন

আফগানিস্তানে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তালেবানের অগ্রযাত্রায় আফগানরাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই করেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (১৬ আগস্ট)  হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ভাষণ দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে।

আফগানিস্তানে এক প্রকার বিনা বাধায় তালেবানের ক্ষমতা দখল এবং মার্কিন-সমর্থক আশরাফ গনি সরকারের পতন ও দেশ ছেড়ে পালানোর  পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিনীদের তুমুল সমালোচনার  মুখে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসব কথা বলেন।  

তালেবানের হাতে আফগান সরকারের  পতনের পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন জো বাইডেন। কাবুলের পতনের পর লজ্জাজনকভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে মার্কিন নাগরিকদের। এ ঘটনায় অপমান-অপদস্ত হতে হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাইডেনকে এক হাত দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় জো বাইডেনকে পদত্যাগও করতে বলেছেন ট্রাম্প। এমনি পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে জাতির উদ্দেশে  ভাষণ দেন তিনি।

ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমাদেরকে সত্য স্বীকার করতে হবে; যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশকে আফগানিস্তানে বহু ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’ আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা দায়ী সেকথাও মেনে নিয়েছেন জো বাইডেন।

কাবুলের পতনের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি তাদেরকে (আশরাফ গনির সরকারকে) তালেবানের সাথে বসে কুটনৈতিকভাবে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করার জন্য আহবান জানিয়েছিলাম। আমার এই উপদেশ তারা সরাসরি  প্রত্যাখান করে। আশরাফ গনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন আফগান সেনারা তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তবে তার  ধারণা অবশ্যই ভুল  ছিল। আফগানরা নিজেদের রক্ষার জন্য লড়েনি।

’দেশটিতে মার্কিন সেনা উপস্থিতি ধরে রাখার মধ্যে আর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ জড়িত নয়’ মন্তব্য করে ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অতীতে আমরা যে ভুল করেছি  সেগুলো বারবার করতে চাই না। দেশটিতে অবস্থান করে মার্কিন সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে  যাক , বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে ওই দেশের গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করুক, বছরের পর বছর অবস্থান করে একটি দেশের পুনর্গঠনে মার্কিন সেনারা সহায়তা করুক-এগুলোর সাথে  যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ কোনোভাবেই জড়িত নয়।  অতীতের এই ভুলগুলো আমরা বারবার করতে পারি না। কারণ বিশ্বে আমাদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ জড়িত রয়েছে এবং আমরা সেগুলো  এড়িয়ে যেতে পারি না।’

গত ২০ বছর আফগানিস্তানের ওপর মার্কিন দখলদারিত্বের ব্যাপারে অনুশোচনা প্রকাশ করে বাইডেন বলেন, ‘আর কিছুদিন আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করে রাখলে সবকিছু ঠিক হয়ে যেত- এমন কথা বলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাই না। একইসঙ্গে আজ আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তার এবং এখান থেকে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, তার দায়িত্ব নিতেও আমি পিছপা হবো না।’

আফগানিস্তানে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত মর্মাহত জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুতপ্ত নই। আরো বহুদিনও যদি সেনা মোতায়েন রাখা হতো এবং তারপর যেদিনই সেনা প্রত্যাহার করা হতো, সেদিনই আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতো।

বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক চেয়েছিলেন, টানা ২০ বছরের আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসুক। তবে  সরে আসতে যে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা কল্পনাও করতে পারেনি তারা। সেনা প্রত্যাহার সুস্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জো বাইডেন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মার্কিনীরা মনে করেন।

Link copied!