ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্যের চালান কেন বিশ্বের জন্য জরুরি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২২, ০৮:৫৮ এএম

ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্যের চালান কেন বিশ্বের জন্য জরুরি

রাশিয়া কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় কয়েক মাস ধরে আটকে আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শস্য। শস্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিশ্বের বেশ কিছু দরিদ্র দেশে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তে দেখা গেছে। বেড়েছে খাদ্যসংকট। গত শুক্রবার ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে পণ্যবাহী জাহাজে করে শস্য রপ্তানির ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তির পর এ নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

ইউক্রেনে কী পরিমাণ শস্য রপ্তানির অপেক্ষায় আটকে আছে এবং তা সেখান থেকে বের করা কেন জরুরি, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। ইউক্রেনে ইতিমধ্যে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা দুই কোটি টন শস্য আটকে পড়ে আছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি বছর ফসলের মৌসুম শেষে আটকে থাকা শস্যের পরিমাণ ৭ কোটি ৫০ লাখ টনে দাঁড়াবে। ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বে মোট উৎপাদিত সূর্যমুখী তেলের ৪২ শতাংশ এখানে উৎপাদন হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনে ১৬ শতাংশ ভুট্টা ও ৯ শতাংশ গম উৎপাদন হয়।

অন্য বছর ইউক্রেন যে পরিমাণ শস্য উৎপাদন করে, তার তুলনায় এ বছর যুদ্ধের কারণে উৎপাদন কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাথাম হাউসের খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক লরা ওয়েলেসলি বলেন, ইউক্রেনে সাধারণত ৮ কোটি ৬০ লাখ টন শস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর ৩০ শতাংশ উৎপাদন কম হতে পারে।

একই সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া থেকেও গমের রপ্তানি কমেছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কৃষি খাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, ইউরোপের বন্দরগুলোতে কৃষিপণ্য বহনকারী রুশ জাহাজগুলোর প্রবেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ক্রেমলিন বলছে, জাহাজের জন্য বীমা বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়েছে। আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলেছে, আফ্রিকা অঞ্চলের মোট গমের চাহিদার ৪০ শতাংশের সরবরাহ আসে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। তবে যুদ্ধের কারণে আফ্রিকায় তিন কোটি টন খাদ্যঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে মহাদেশটিতে খাদ্যদ্রব্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। নাইজেরিয়ায় পাস্তা ও রুটির মতো খাদ্যদ্রব্যগুলোর দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

একইভাবে ইয়েমেন প্রতিবছর ইউক্রেন থেকে ১০ লাখ টনের বেশি গম আমদানি করে থাকলেও এ বছর যুদ্ধের কারণে সরবরাহ কমে যায়। এতে দেশটিতে গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে ময়দার দাম ৪২ শতাংশ ও রুটির দাম ২৫ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে। ইউক্রেনের গমের আরেক শীর্ষ আমদানিকারক দেশ সিরিয়ায় রুটির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

গত শুক্রবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শস্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমছে। তবে চাথাম হাউসের খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক লরা ওয়েলেসলি মনে করেন, ইউক্রেন থেকে প্রচুর পরিমাণে শস্যের চালান না হলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশেই ঘাটতি দেখা দেবে।

তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে এসব দেশে রুটির দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে বড় ধরনের সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।’

Link copied!